বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন সবসময়ই সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসিরউদ্দিন পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন—সরকার যখন চাইবে, তখনই কমিশন নির্বাচন আয়োজনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্র্যাসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি বলেন, কমিশন কোনোভাবেই দোষ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। তিনি বলেন, “যাতে বলা না হয়—ইসি প্রস্তুত ছিল না বা যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়নি, সে জন্য আমরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
সিইসি আরও জানান, সরকার যখনই নির্বাচন চাইবে, তখনই তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার মতো সামর্থ্য কমিশনের আছে।
ভোটের সময় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে অনেকের দুশ্চিন্তা থাকে। এ বিষয়ে সিইসি আশ্বস্ত করে বলেন, নির্বাচনের দায়িত্ব যখন ইসির হাতে, তখন আইনশৃঙ্খলাও তাদের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করা হবে। তিনি আশ্বাস দেন—যেমন অতীতে হয়েছে, এবারও নিরাপত্তা বাহিনী সব ধরনের সহায়তা করবে।
সিইসির মতে, নির্বাচনের দিন ৩০০ আসনে ভোট একসঙ্গে হবে। তাই যদি কোথাও মব বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে গুজব রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় চ্যালেঞ্জ। সিইসি নাসিরউদ্দিন বলেন, “এই দেশটা গুজবের দেশ। গুজব কানে না নিতে হবে।” তিনি জানান, নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে অনিয়ম ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, ভোট পরিচালনায় সরকারের সহযোগিতা অপরিহার্য। বাজেট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনিক সহায়তা—এসব ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে তিনি দাবি করেন, সরকার কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই ইসিকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠকে কালোটাকার প্রসঙ্গও উঠে আসে। সিইসি জানান, পুরোপুরি কালোটাকা রোধ করা কঠিন, তবে ইসি সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনগণের সঙ্গে নিয়ে সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে নির্বাচনকে ঘিরে সঙ্কট তৈরি হয়। এ প্রসঙ্গে সিইসি আশাবাদী কণ্ঠে বলেন, “আমার ধারণা, রাজনৈতিক দলগুলো দেশের স্বার্থ সবার ওপরে রাখবে। শেষ পর্যন্ত একটা অবস্থানে এসে তারা সমঝোতায় পৌঁছাবে।”
গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটি ছিল সিইসির সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। বৈঠকে মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক প্রধান ডেভিড মো এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।