লাল গ্রহ মঙ্গল নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। এবার বিজ্ঞানীরা এক নতুন সাফল্যের পথে এগোচ্ছেন। তাঁরা মঙ্গলের মাটির গভীরে কী লুকিয়ে আছে, সেই অন্তর্গত রহস্য জানার দরজা খুলে ফেলেছেন। আর এর কৃতিত্ব মূলত মঙ্গলের ভূমিকম্প ও নাসার ইনসাইট ল্যান্ডারের।
নাসার একাধিক রোভার বহুদিন ধরেই মঙ্গলের মাটির ওপরের চিত্র ফুটিয়ে তুলছে। মাটির উপাদান, ধুলোর প্রকৃতি, বাতাসের গতি—এসব তথ্য রোভারের মাধ্যমে পৃথিবীতে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া, কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইটও কাছ থেকে মঙ্গল পর্যবেক্ষণ করে তথ্য জোগাড় করছে।
২০১৮ সালে মঙ্গলের মাটিতে নেমে প্রথমবার স্থায়ীভাবে ভূমিকম্পের শব্দ শোনে ইনসাইট ল্যান্ডার। যদিও এখন তা অবসর নিয়েছে, তবে তার সংগৃহীত ডেটা আজও বিজ্ঞানীদের নতুন তথ্য দিয়ে চলেছে। মঙ্গলের ভেতরের মাটি ও শিলার গঠন সম্পর্কে এই ডেটা এক অমূল্য ভাণ্ডার।
যখন মঙ্গলে ভূমিকম্প হয়েছে, তখন সেই কম্পনের তরঙ্গ মাটির গভীর থেকে উঠে এসেছে। সেই তরঙ্গ বিশ্লেষণ করেই বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন মাটির ভেতরের স্তর কেমন। এই তথ্য তাঁদের সামনে মঙ্গলের গর্ভে লুকোনো ৪০০ কোটি বছরের ইতিহাস উন্মোচন করছে।
পৃথিবীতে টেকটোনিক প্লেটের ক্রমাগত নড়াচড়া মাটির নিচের আসল ইতিহাস মুছে দিয়েছে। ভূত্বকের ওঠানামার কারণে প্রাচীন রহস্য আর ধরা যায় না।
কিন্তু মঙ্গল আলাদা। সেখানে টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া হয় না। তাই ৪০০ কোটি বছর আগের মঙ্গলের ভেতরের অবস্থা আজও প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ, মঙ্গলের মাটির ভেতরে যেন সময় থেমে আছে। আর সেই জমাটবাঁধা ইতিহাসই মঙ্গলের জন্মগাথা বলবে।
বিজ্ঞানীরা এখন সেই প্রাচীন মাটি বিশ্লেষণ করে বুঝতে চাইছেন মঙ্গল কীভাবে গঠিত হয়েছিল। কোন উপাদানে ভর করে গ্রহটি তৈরি হয়েছিল, কেমন ছিল তখনকার পরিবেশ—এসব প্রশ্নের উত্তর ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে।
এই আবিষ্কার শুধু মঙ্গল নয়, পুরো সৌরজগতের ইতিহাস বোঝার পথ খুলে দিয়েছে। যদি মঙ্গলের জন্মরহস্য পরিষ্কার হয়, তবে পৃথিবীরও আদি রহস্য বুঝতে সাহায্য করবে।