রামকৃষ্ণ ঘোষ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬২ সালে যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের আমদাবাদ গ্রামে। তাঁর পিতা গৌরাঙ্গ পদ ঘোষ। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
শিক্ষাজীবনে তিনি ১৯৭৮ সালে আমদাবাদ হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৬ সালে এম এম কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। এক সময় ঝাউদিয়া মুন্সী মেহেরুল্লাহ একাডেমী হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলেন। পরে তিনি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে বসবাস করছেন।
ছাত্রজীবন থেকেই ক্রীড়ার প্রতি গভীর টান ছিল রামকৃষ্ণ ঘোষের। এ্যাথলেটিকসে তিনি ১৫০০ মিটার দৌড়ে বিভাগীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি ফুটবলেও সক্রিয় ছিলেন। ১৯৮০ সালে তিনি “আমদাবাদ জাগরণী ক্লাব”-এর হয়ে খেলতেন। তবে প্রকৃত খ্যাতি আসে তাঁর রেফারি জীবন থেকে।
১৯৮৩-৮৪ সালে তিনি ঢাকা মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজ (জে ডি পিই) থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে রেফারি সার্টিফিকেট অর্জন করেন। এরপর ১৯৮৬ সাল থেকে নিয়মিত রেফারির দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ধাপে ধাপে তিনি সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেন—১৯৮৭ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির রেফারি, ১৯৯২ সালে প্রথম শ্রেণির রেফারি এবং অবশেষে ১৯৯৬ সালে ফিফার আন্তর্জাতিক ব্যাজ অর্জন করেন।
বাংলাদেশের ফুটবলে রামকৃষ্ণ ঘোষের নাম উচ্চারণ হলে গর্বের সঙ্গে উঠে আসে তাঁর আন্তর্জাতিক সাফল্যের গল্প।
তিনি দেশ-বিদেশে বহু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের পেশোয়ারে এশিয়া কাপের বাছাইপর্বে ভারত-পাকিস্তান ও মালদ্বীপ-ভারতের ম্যাচ।১৯৯৭ সালে ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতে ভিয়েতনাম ও বার্মার খেলা।১৯৯৮ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুতে এশিয়া কাপ অনূর্ধ্ব-১৯ আসরে তাজিকিস্তান-ভারত, ভারত-ভুটান এবং মালদ্বীপ-পাকিস্তানের ম্যাচ।১৯৯৯ সালে বঙ্গবন্ধু কাপ টুর্নামেন্টে ইন্দোনেশিয়া ও কুয়েতের খেলা।২০০০ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এশিয়া কাপ বাছাইপর্বে দক্ষিণ কোরিয়া-চীনা তাইপে এবং মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড ম্যাচ।
দেশীয় লিগেও তিনি সেরা হিসেবে স্বীকৃতি পান। ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় ফুটবল লিগে তিনি “বাংলাদেশের সেরা রেফারি” নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে দিল্লিতে আয়োজিত ফিফা রেফারি সেমিনারে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পাঠানো চার সদস্যের দলে তিনি ছিলেন অন্যতম। এই সেমিনারের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক মানের রেফারিংয়ে আরও দক্ষতা অর্জন করেন।
শুধু রেফারি হিসেবেই নয়, রামকৃষ্ণ ঘোষ একজন সংগঠক হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি “আমদাবাদ জাগরণী ক্লাব এ্যান্ড পাঠাগার”-এর নাট্য ও ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। স্থানীয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা তাকে জনমনে প্রিয় করে তোলে।
রামকৃষ্ণ ঘোষ শুধু যশোরের গর্ব নন, তিনি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম। একজন শিক্ষক, খেলোয়াড়, রেফারি এবং সংগঠক হিসেবে তাঁর অবদান ফুটবলপ্রেমী প্রজন্মের কাছে প্রেরণা হয়ে থাকবে। তাঁর জীবনী প্রমাণ করে, প্রতিভা আর অধ্যবসায়ের মেলবন্ধন মানুষকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিতে পারে।