ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন বিরাজ করছে এক ধরনের টানটান উত্তেজনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলেও ফলাফল ঘোষণার আগে সিনেট ভবনের ভেতরে-বাইরে জমেছে ভিড়। প্রার্থী, সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন—কে হবেন তাদের নেতৃত্বের প্রতীক।
ভোট শেষ হতেই নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে প্রবেশ করেছেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকরা। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। সবার চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা আর কৌতূহল—পছন্দের প্রার্থী জিতবেন কি না, সেই চিন্তাই ভর করেছে তাদের মনজুড়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে ভিপি ও জিএস পদকে কেন্দ্র করেই বেশি আলোচনা চলছে। শেষ মুহূর্তে চলছে হিসাব-নিকাশ—কে এগিয়ে, কার সম্ভাবনা বেশি। একদল শিক্ষার্থী উচ্ছ্বাসে ‘ঢাবি ঢাবি’ স্লোগান দিচ্ছেন, অন্যদিকে অনেকে আবার নীরবে অপেক্ষা করছেন ফলাফলের ঘোষণার জন্য। পুরো পরিবেশে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়লেও ভেতরে ভেতরে চাপা উৎকণ্ঠা দমে নেই।
সবচেয়ে প্রতীক্ষিত মুহূর্তটি এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান কিছুক্ষণের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এই ঘোষণা ডাকসুর ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা দিবে।
গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। সারাদিন ধরে শিক্ষার্থীরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। তবে ভোট শেষে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। ছাত্রদল ও শিবিরের নেতারা অভিযোগ তোলেন—ভোটকেন্দ্রে নানা ধরনের কারচুপি হয়েছে।
অন্যদিকে টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের অভিযোগ করেন, প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার দাবি, ভোটকেন্দ্রের বাইরে ছাত্রদল প্রভাব বিস্তার করেছে আর ভেতরে পরিকল্পিতভাবে সুবিধা পেয়েছে একটি নির্দিষ্ট প্রার্থী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে।
সব অভিযোগ-প্রত্যাশার মাঝেও শিক্ষার্থীরা চান একটি স্বচ্ছ ও ন্যায্য ফলাফল। ডাকসু নির্বাচন শুধু নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার বড় একটি প্রতীক। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই তারা আশা করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীদের অধিকার, উন্নয়ন এবং একাডেমিক পরিবেশ আরও শক্তিশালী হবে।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ঢাকার আকাশে এখন উৎসব আর উত্তেজনার মিশেল। সিনেট ভবনের ভেতরে যে ঘোষণা আসতে যাচ্ছে, তা কেবল বিজয়ীদের নাম প্রকাশ নয়—বরং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ভিত্তি স্থাপন করবে। শিক্ষার্থীরা তাই অপেক্ষায় আছেন সেই মুহূর্তটির, যখন ঘোষণা হবে—কার হাতে উঠছে ডাকসুর হাল।