টেনিস দুনিয়ায় নতুন তারকার উত্থান মানেই দর্শকদের মধ্যে আলোড়ন। সম্প্রতি ইউএস ওপেন জিতে সেই আলোড়ন ছড়িয়েছেন বেলারুসের তারকা টেনিস খেলোয়াড় এরিনা সাবালেঙ্কা। আবেগ নিয়ন্ত্রণ আর শৃঙ্খলাকে অস্ত্র বানিয়ে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে কোর্টে এবং জীবনে সাফল্য ধরা যায়। জয় শেট্টির জনপ্রিয় পডকাস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবালেঙ্কা খোলাখুলি জানিয়েছেন তাঁর জীবন, সংগ্রাম ও সাফল্যের নানা অজানা দিক।
শৃঙ্খলাই সাফল্যের আসল মন্ত্র
চারবারের গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী সাবালেঙ্কার মতে, জীবনে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো শৃঙ্খলা। প্রতিদিন সকালে উঠে নিয়মিত অনুশীলন করা, শারীরিক অসুবিধা বা মানসিক ক্লান্তি উপেক্ষা করে রুটিন মেনে চলা—এটাই তাঁকে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছে। তাঁর ভাষায়,
“কিছু দিন এমন আসে যখন শরীর একদমই সায় দেয় না। কিন্তু তখনও আমি নিজেকে ঠেলে অনুশীলনে যাই। কারণ আমি জানি, আমার কাজটা আমি ভালোবাসি, আর ভালোবাসলে সফলতা আপনাআপনি আসবেই।”
কঠিন সময় আর মানসিক লড়াই
টেনিস খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ারে ব্যর্থতার মুখোমুখি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাবালেঙ্কাও তার ব্যতিক্রম নন। তিন বছর আগে ক্রমাগত ‘ডাবল ফল্ট’ করতে করতে তিনি খেলাই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। বারবার ব্যর্থ হওয়ায় আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়েছিল।
তবে মনোবিদের সহায়তা, অনুশীলনে ধৈর্য আর হাল না ছাড়ার মানসিকতা তাঁকে নতুন করে গড়ে তোলে। সেই শক্ত মানসিকতার ফলেই তিনি শীঘ্রই প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতেন। সাবালেঙ্কার বিশ্বাস, প্রত্যেকের জীবনেই কঠিন সময় আসে, আর সেটা জয় করার ক্ষমতাই মানুষকে সফল করে।
সাবালেঙ্কার বিশেষ প্রাতরাশের রহস্য
খেলায় পারফরম্যান্স বজায় রাখতে সাবালেঙ্কা তাঁর প্রাতরাশের রুটিনে কখনও পরিবর্তন আনেন না। প্রতিটি টুর্নামেন্টেই তিনি খান—
- অ্যাভোকাডো টোস্ট
- দু’দিক ভাজা ডিম
- স্মোকড স্যালমন
তিনি হাসতে হাসতে বলেন, “ডিমটা যদি নিখুঁতভাবে ভাজা না হয়, আমি আয়োজকদের কষ্টে ফেলে দিই।” এই খাদ্যাভ্যাস তাঁকে মানসিকভাবে দৃঢ় রাখে। এছাড়াও খেলার সময় ছোট ছোট কুসংস্কারও মেনে চলেন। যেমন—যদি কোনও বল কিডের কাছ থেকে বল নিয়ে পয়েন্ট জেতেন, পরের সার্ভিসেও সেই একই কিডের কাছ থেকে বল নিতে চেষ্টা করেন।
শক্তিশালী প্রতিপক্ষ নিয়ে মতামত
সেরা প্রতিপক্ষের প্রসঙ্গে সাবালেঙ্কা কূটনৈতিকভাবেই জানান, প্রত্যেক খেলোয়াড়ই আলাদা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। তবে শারীরিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন কোকো গফ ও ইগা শিয়নটেকের নাম। তাঁদের গতি, ধৈর্য এবং প্রতিটি পয়েন্টের জন্য লড়াই করার মানসিকতা তাঁকে সবসময় মুগ্ধ করে।
টেনিস: একক খেলা হলেও দলগত প্রভাব অস্বীকার করা যায় না
অনেকের মতে টেনিস একাকীত্বের খেলা। তবে সাবালেঙ্কা মনে করেন, প্রতিটি জয় তাঁর পিছনের টিমেরও প্রাপ্য। কোচ, ফিজিও ও সাপোর্ট স্টাফদের কঠোর পরিশ্রম তাঁকে কোর্টে লড়াই করার শক্তি দেয়।
ফর্মুলা ওয়ানের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা অন্তত খেলার মাঝে বিরতি পাই। কিন্তু ফর্মুলা ওয়ান চালকেরা পুরো জীবন বাজি রেখে দৌড়ান। আমার কাছে সেটা সত্যিই অসম্ভব সাহসের কাজ।”
ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচগুলো
সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের তিনটি সেরা ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সাবালেঙ্কা প্রথমেই স্মরণ করেন ২০২১ সালের ইউএস ওপেন সেমিফাইনাল, যেখানে ম্যাডিসন কিজ়ের বিরুদ্ধে প্রথম সেট ০-৬ হেরে গিয়েও শেষ দুই সেট জিতে ফিরেছিলেন।
দ্বিতীয় সেরা ম্যাচ তাঁর জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়, যা তাঁকে বিশ্বাস জুগিয়েছিল যে তিনি বড় মঞ্চে সফল হতে পারবেন। তৃতীয় ম্যাচটির নাম মনে করতে না পারলেও, তাঁর জীবন বদলে দেওয়া ওই দুটি মুহূর্তকে তিনি সবসময় মনে রেখেছেন।
শেষ কথা
এরিনা সাবালেঙ্কার গল্প শুধু একজন টেনিস খেলোয়াড়ের নয়, বরং একজন মানুষের, যিনি শৃঙ্খলা, দৃঢ়তা আর ইতিবাচক মানসিকতা দিয়ে জীবনের কঠিন সময় জয় করেছেন। তাঁর প্রাতরাশের রুটিন, অনুশীলনের অভ্যাস আর মানসিক শক্তি তাঁকে আজকের সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।
সাবালেঙ্কার জীবন আমাদের শেখায়—যদি আপনি নিজের কাজকে ভালোবাসেন, হাল না ছাড়েন আর প্রতিদিন নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যান, তবে সাফল্য একদিন আপনাকেই খুঁজে নেবে।