বিশ্বজুড়ে ১০০ বছর পার করা মানুষদের পাওয়া তুলনামূলকভাবে বিরল। তবে জাপান বারবার প্রমাণ করছে, স্বাস্থ্য, জীবনযাপন এবং সংস্কৃতিগত অভ্যাসের কারণে এখানকার মানুষের দীর্ঘায়ু অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৪ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জাপানে শতায়ু মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজারে, যা এক অভূতপূর্ব বিশ্বরেকর্ড।
জাপানে শতায়ু মানুষের মধ্যে মহিলারা বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে। বর্তমানে মোট শতায়ুর মধ্যে প্রায় ৮৮ শতাংশই নারী। অর্থাৎ, ৯৯ হাজার শতায়ুর মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা প্রায় ৮৭ হাজার ৭৮৪ জন, যেখানে পুরুষের সংখ্যা মাত্র ১১ হাজার ৯৭৯। এই বৈষম্য স্পষ্ট করে যে, মহিলারা শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষদের তুলনায় দীর্ঘায়ু হয়ে থাকেন।
জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে শতায়ু মানুষের সংখ্যা বেড়েছে আরও ৪ হাজার ৬৪৪ জন। এই প্রবৃদ্ধি বজায় থাকলে খুব শিগগিরই জাপান এক লক্ষ শতায়ুর মাইলফলক ছুঁতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা, আগামী বছরেই এই সংখ্যা এক লক্ষ অতিক্রম করবে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে জাপানে প্রতি এক লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে গড়ে ৮০.৫৮ জন শতায়ু। বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারতেও যেখানে ১০০ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা খুঁজে পাওয়া কঠিন, সেখানে তুলনামূলকভাবে ছোট জনসংখ্যার দেশ জাপানে এমন রেকর্ড নজিরবিহীন।
২০২৪ সালের হিসাবে জাপানি মহিলাদের গড় আয়ু ৮৭.১৩ বছর, যেখানে পুরুষদের গড় আয়ু ৮১.০৯ বছর। অর্থাৎ, মহিলারা গড়ে প্রায় ৬ বছর বেশি বাঁচেন। এটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, মহিলাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক সম্পৃক্ততা, মানসিক দৃঢ়তা এবং চিকিৎসা সচেতনতা দীর্ঘায়ুতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
জাপান সরকার প্রথমবার শতায়ু মানুষের সংখ্যা গণনা শুরু করে ১৯৬৩ সালে। সেই সময় থেকে প্রতিবছরই এই সংখ্যা রেকর্ড করা হচ্ছে এবং ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দীর্ঘমেয়াদি তথ্যভাণ্ডার প্রমাণ করে, জাপানের নাগরিকরা সুস্থ ও দীর্ঘায়ু জীবনযাপনে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে।
জাপানের শতায়ু বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জীবনযাত্রা বিশ্বজুড়ে গবেষকদের কৌতূহলের কেন্দ্র। নিয়মিত হাঁটা, কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য, মাছ ও সবজিভিত্তিক খাবার, ধূমপান ও মদ্যপানের কম প্রবণতা, পরিবার ও সমাজকেন্দ্রিক জীবনধারা—এসবই দীর্ঘায়ুর মূল রহস্য বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
জাপানের শতায়ু মানুষের সংখ্যা ৯৯ হাজার ছোঁয়া শুধু একটি সংখ্যা নয়, বরং এটি একটি বার্তা—সুস্থ জীবনধারা, চিকিৎসা উন্নয়ন এবং সামাজিক সহায়তা দীর্ঘায়ুর মূল চাবিকাঠি। মহিলাদের অসাধারণ দাপট আবারও প্রমাণ করছে, সুস্থ জীবনযাপনে নারীরা পুরুষদের থেকে এগিয়ে। বিশ্বজুড়ে দীর্ঘায়ুর অনুপ্রেরণামূলক মডেল হয়ে উঠেছে জাপান।