যশোর-নড়াইল মহাসড়কে ঘটে গেল আরেকটি হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাস ধাক্কা দেয় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা বাঁশ বোঝাই ট্রাককে। এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা, এক পুলিশ কর্মকর্তা ও আরেক যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
রবিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বাঘারপাড়া উপজেলার ভাঙ্গুড়া বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা “নড়াইল এক্সপ্রেস” নামের বাসটি যশোরগামী ছিল। পথে বাসচালক হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেন।
দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো তিনজন হলেন: যশোর সদর উপজেলার বড় ভেকুটিয়া গ্রামের মুজিদ হাওলাদারের ছেলে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক এম জাফর আলী।বসুন্দিয়া গ্রামের আহমেদ আলীর ছেলে আক্তার হোসেন।বাঘারপাড়া উপজেলার ছাতিয়ানতলা এলাকার বাসিন্দা ও পুলিশ উপপরিদর্শক নিক্কন আঢ্য (৩৫)।
তুলারামপুর হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বাঁশ বোঝাই একটি ট্রাক সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। দ্রুতগতির বাসটি পেছন থেকে এসে ধাক্কা দিলে ট্রাকের বাঁশ বাসের সামনের গ্লাস ভেদ করে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান যাত্রী আক্তার হোসেন।
অন্য দুইজন গুরুতর আহত অবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে, সেখানে চিকিৎসক এম জাফর আলীকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ কর্মকর্তা নিক্কন আঢ্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হলেও, পথে অবস্থার অবনতি হলে নড়াইল সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত এসআই নিক্কন আঢ্য ৩৭তম ব্যাচে আউটসাইড ক্যাডেট হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি লোহাগড়া থানার লাহুড়িয়া তদন্ত কেন্দ্রে যোগদান করেন। এর আগে তিনি র্যাবে কর্মরত ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি মুন্সিগঞ্জে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে এই দুর্ঘটনার শিকার হন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জুবায়ের আহমেদ বলেন, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই আবু জাফরের মৃত্যু হয়েছিল। আর এসআই নিক্কন আঢ্যের অবস্থা এতটাই সংকটজনক ছিল যে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
তুলারামপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ সেকেন্দার আলী জানান, নিহত স্বেচ্ছাসেবক নেতা ও আক্তারের মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আর পুলিশ কর্মকর্তার মরদেহ নড়াইল সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে পুলিশ কর্মকর্তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে নড়াইলের নবাগত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অর্থ) নূর- ই আলম সিদ্দিকী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আশরাফুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সদর হাসপাতালে ছুটে যান।
জেলা পুলিশ সূত্র জানা গেছে, নিহত পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যদের সম্মতিতে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলা পুলিশ লাইনসে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পুলিশ কর্মকর্তা নিক্কন আঢ্যের মরদেহ নেয়া হবে তার গ্রামের বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়ার পুকুরিয়া গ্রামে। সেখানে দুপুরের দিকে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।