হৃদরোগ আজকের দিনে সবচেয়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলোর একটি। দ্রুত ও কার্যকর চিকিৎসা না হলে অনেক সময় এটি প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের সংকটময় মুহূর্তে সিসিইউ মনিটর এবং ডিফিব্রিলেটর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) সংযোজিত হয়েছে চারটি আধুনিক মনিটর এবং ডিফিব্রিলেটর, যা স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবু হাসনাত মো. আহসান হাবিব প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ফিতা কেটে এই নতুন উদ্যোগের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হিমাদ্রী শেখর, কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. গোলাম মাহফুজ রাব্বানী, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. তৌহিদুল ইসলাম, আরএমও ডা. হাবিবা সিদ্দিকা ফোয়ারাসহ অন্যান্য চিকিৎসক ও সেবিকারা।
নতুন সংযোজিত সিসিইউ মনিটরের মাধ্যমে হৃদরোগী রোগীদের জন্য আরও নির্ভুল ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এই মনিটরের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে—রোগীর হৃদস্পন্দন (Heart Rate), রক্তচাপ (Blood Pressure), রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা (Oxygen Saturation), শ্বাস-প্রশ্বাসের হার (Respiration Rate),অন্যান্য ভাইটাল সাইনস (Vital Signs) এর ফলে চিকিৎসকরা রোগীর যেকোনো জটিলতা দ্রুত শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
ডিফিব্রিলেটর হলো একটি জীবনরক্ষাকারী যন্ত্র, যা হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত রোগীর হৃদপিণ্ডে নির্দিষ্ট মাত্রার বৈদ্যুতিক শক প্রদান করে হৃদস্পন্দনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। যশোর সিসিইউতে এই যন্ত্র যুক্ত হওয়ায় এখন থেকে জীবন-হুমকির মুহূর্তেও রোগীকে বাঁচানোর সুযোগ বহুগুণ বেড়ে গেলো।
২০০৫ সালে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিট নির্মাণ করা হয় এবং ২০০৬ সালের ১২ অক্টোবর এটি উদ্বোধন করা হয়। তবে শুরু থেকেই জনবল ঘাটতি ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে সঠিকভাবে পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ধাপে ধাপে কিছু যন্ত্র সংযুক্ত হলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। এবার চারটি সিসিইউ মনিটর এবং ডিফিব্রিলেটর যোগ হওয়ায় সিসিইউর সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডা. হাসানুজ্জামান বলেন, “সিসিইউ মনিটর ও ডিফিব্রিলেটর সংযুক্ত হওয়ায় হৃদরোগীদের চিকিৎসায় আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। এখন আমরা রোগীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক তথ্য নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারব এবং প্রয়োজনে ডিফিব্রিলেটরের মাধ্যমে জীবন বাঁচাতে পারব।”
এই উদ্যোগের ফলে যশোরসহ আশেপাশের জেলার হৃদরোগীরা ঢাকায় ছুটে না গিয়েই উন্নত সিসিইউ সুবিধা পাবেন। এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে, পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগও বাড়বে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে চারটি সিসিইউ মনিটর ও ডিফিব্রিলেটর সংযুক্ত হওয়া নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শুধু হৃদরোগীদের জন্য নয়, পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সবার জন্য সহজলভ্য করতে এই ধরনের উদ্যোগ আরও বাড়ানো জরুরি।