‘Survival of the Fittest’—এই তত্ত্বের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। চার্লস ডারউইনের Origin of Species (১৮৫৯) বইয়ে প্রথম এই ধারণা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। এর বাংলা করলে দাঁড়ায়—“অস্তিত্বের লড়াইয়ে যোগ্যতমের উদ্ভব”। অর্থাৎ যে ব্যক্তি পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে এবং দক্ষতা প্রদর্শন করে, সেই টিকে থাকে।
আজকের দিনে এই তত্ত্ব কেবল প্রকৃতির বিবর্তনে নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তির লড়াইয়েও প্রযোজ্য। বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI) আমাদের জীবনযাত্রা ও কর্মক্ষেত্রকে আমূল বদলে দিচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে—এই প্রযুক্তির যুগে টিকে থাকতে আমাদের কী জানা উচিত?
এক সময় ভাবা হতো এআই কেবল ভবিষ্যতের বিষয়। কিন্তু এখন এআই আমাদের চারপাশের বাস্তবতায় মিশে গেছে। চাকরিক্ষেত্রেই এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে এআই-এর কারণে প্রতিমাসে হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের চাকরি হারাতে পারেন।
তাহলে সমাধান কী? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন গুগল ডিপমাইন্ডের সিইও ডেমিস হাসাবিস। গ্রিসের অ্যাক্রোপলিসের কাছে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন—“যদি আমরা এআই-কে সঙ্গী করতে না শিখি, তবে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”
ডেমিস হাসাবিস শুধু এআই গবেষক নন; ২০২৪ সালে তিনি রসায়নে নোবেল পুরস্কারও পান। তাঁর মতে, আগামী দশ বছরের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। কারণ, এআই প্রতিনিয়ত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। কখনও কখনও সপ্তাহে সপ্তাহে নতুন আপডেট আসছে।
তিনি আরও বলেন, খুব শিগগিরই Artificial General Intelligence (AGI)—অর্থাৎ এমন এক এআই তৈরি হতে পারে, যা মানুষের মতো বিশ্লেষণ ও যুক্তি প্রদর্শন করতে পারবে। যদিও এখনো এজিআই পুরোপুরি বাস্তব হয়নি, গুগল আগামী দশ বছরের মধ্যে এটি তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
ডেমিস হাসাবিস মনে করেন, এআই-এর সঙ্গে লড়াই নয় বরং সহাবস্থানই ভবিষ্যতের মূলমন্ত্র। এজন্য দরকার মেটা-স্কিল—যে দক্ষতা মানুষকে যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো: ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং (সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি): সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে যৌক্তিক সমাধান দেওয়ার ক্ষমতা। ক্রিয়েটিভিটি (সৃজনশীলতা): নতুন ধারণা তৈরি ও উদ্ভাবনের দক্ষতা।
অ্যাডাপ্টেবিলিটি (পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা): দ্রুত পরিবর্তনশীল দুনিয়ায় টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। এই দক্ষতাগুলো মানুষকে প্রতিনিয়ত শিখতে, পরিবর্তিত পরিবেশে মানিয়ে নিতে ও নতুন সমাধান তৈরি করতে সক্ষম করে।
ডেমিসের স্পষ্ট বার্তা হলো—আজীবন শেখার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। কর্মজীবনের প্রতিটি ধাপে নতুন জ্ঞান অর্জন ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমেই কেউ প্রকৃত অর্থে ‘ফিটেস্ট’ বা যোগ্যতম হতে পারবে। যারা নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে না, তারা ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়বে।
এআই যুগে টিকে থাকার একমাত্র উপায় হলো—শেখা, মানিয়ে নেওয়া এবং সৃজনশীল চিন্তাশক্তি অর্জন করা। চার্লস ডারউইনের “যোগ্যতমের উদ্ভব” তত্ত্ব আজও সমান প্রাসঙ্গিক, তবে এবার যুদ্ধটা প্রকৃতির নয়—প্রযুক্তির সঙ্গে।
👉 তাই ভবিষ্যতের এআই-নির্ভর দুনিয়ায় সফল হতে হলে এখনই শুরু করতে হবে শেখার নতুন যাত্রা। আপনার দক্ষতাই নির্ধারণ করবে আপনি টিকে থাকবেন নাকি হারিয়ে যাবেন প্রযুক্তির অজানা অন্ধকারে।