বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ, আটক এবং দেশে ফেরার ঘটনা প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। সম্প্রতি নড়াইলের এক তরুণী দীর্ঘ কারাভোগ শেষে ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে স্বদেশে ফিরেছেন।
ভারতে অবৈধভাবে বসবাসের দায়ে আটক হওয়া নড়াইল জেলার কালিয়া থানার সেতল বাতে গ্রামের বাসিন্দা রেশমা খাতুন (২৪) প্রায় দুই বছর কারাভোগের পর মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেল ৪টার দিকে দেশে ফেরেন। ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে হরিদাসপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন পুলিশ ও বিজিবির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে।
ভারতের বনগাঁ ব্যুরো অব ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, রেশমা খাতুন ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বৈধ পাসপোর্টে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের বাইকেল্লা এলাকায় এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তার পাসপোর্ট হারিয়ে যায়। এরপর তিনি অবৈধভাবে অবস্থান করতে থাকেন।
২০২৩ সালের ১৯ জুলাই ভারতীয় পুলিশ রেশমাকে আটক করে। আদালতের নির্দেশে তাকে বাইকেল্লা কারাগারে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি এক বছর ১১ মাস সাজাভোগ করেন।
কারাভোগ শেষে রেশমার বিষয়ে মানবাধিকারভিত্তিক সংস্থাগুলো সক্রিয় হয়। দু’দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং ট্রাভেল পারমিটের ব্যবস্থা করা হয়। অবশেষে অনুমোদন পেয়ে তিনি স্বদেশে ফেরার সুযোগ পান।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইলিয়াছ হোসেন মুন্সী জানান, আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে রেশমাকে বেনাপোল পোর্ট থানার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি রাসেল মিয়া বলেন, দেশে ফেরা রেশমাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য মানবাধিকার সংস্থা জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার নিজেদের জিম্মায় নিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাটির ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর শফিকুল ইসলাম জানান, দ্রুত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রেশমাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে প্রবাসযাত্রার ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল দিয়ে হলেও স্বজনদের কাছে ফিরছেন রেশমা।
প্রতিবছর বাংলাদেশি নাগরিকদের নানা কারণে ভারত থেকে ফেরত আসতে হয়। অনেকেই কাজ বা চিকিৎসার জন্য বৈধ পথে যান, কিন্তু পাসপোর্ট-ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বা কাগজপত্র হারালে তারা বিপাকে পড়েন। এ ধরনের ঘটনায় আটক হয়ে কারাভোগের নজিরও কম নয়। পরে মানবাধিকার সংস্থা ও সরকারি উদ্যোগে ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়।
রেশমা খাতুনের দেশে ফেরা শুধু একটি ব্যক্তিগত ঘটনার সমাপ্তি নয়, বরং অবৈধভাবে বিদেশে অবস্থানের ঝুঁকির বাস্তব চিত্র। আইনসঙ্গত পথে বিদেশ যাত্রা না করলে তা ব্যক্তির জীবন ও পরিবারের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। রেশমার ঘটনা অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে থাকবে।