মানুষ কেন বহুজনের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে? সম্পর্কের বিবর্তন ও বাস্তবতা

মানুষ কেন বহুজনের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে? জানুন বিবর্তন, হরমোন ও সমাজ কীভাবে সম্পর্কের ধরনকে গড়ে তোলে।

আমাদের সময়টা এখন সম্পর্কের জটিলতায় ভরা। ডেটিং অ্যাপগুলোতে এক ক্লিকেই শত শত অপশন, সম্পর্কের ধরনও প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। এই বাস্তবতায় একটি চিরন্তন প্রশ্ন নতুনভাবে সামনে আসছে—মানুষ কি সত্যিই একগামী নাকি বহুজনের প্রতি আকর্ষণ বোধ করা স্বাভাবিক বিষয়?

পলিয়্যামোরি: আধুনিক সম্পর্কের একটি ধরণ

‘পলিয়্যামোরি’ শব্দটি ইংরেজি থেকে এসেছে, যার মানে হলো একাধিক প্রেমের সম্পর্ক যেখানে সব পক্ষই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং সম্মত। অর্থাৎ, প্রতারণা নয় বরং খোলামেলা বোঝাপড়ার মাধ্যমে একই সময়ে একাধিক সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা।

উদাহরণস্বরূপ, লন্ডনে বসবাসরত রোমানিয়ান নারী অ্যালাইনা যখন প্রথমবার পলিয়্যামোরি সম্পর্কে জানলেন, তখনই প্রশ্ন তুললেন—“মানুষ কি সত্যিই প্রাকৃতিকভাবে একগামী?”

বিবর্তনের আলোকে সম্পর্ক

মানুষের আচরণ বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা প্রায়ই বানরজাতীয় প্রাণীদের মিলনপ্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করেন।

গরিলা: একটি পুরুষ গরিলা একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। তবে এর একটি ভয়াবহ দিক হলো—পুরুষ গরিলা অন্যের সন্তান হত্যা করে, যাতে মা দ্রুত নতুন প্রজননের জন্য প্রস্তুত হয়।

শিম্পাঞ্জি ও বোনোবো: নারীরা একাধিক পুরুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, ফলে সন্তানের প্রকৃত পিতৃপরিচয় নির্ধারণ করা যায় না। এতে শাবকের ওপর হামলার ঝুঁকি কমে যায়।

মানব সমাজেও প্রাচীন কালে বহুগামীতা প্রচলিত ছিল। তবে প্রায় ২০ লাখ বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তন মানুষকে দলবদ্ধভাবে থাকতে বাধ্য করে। সেই জটিল সামাজিক কাঠামো সামলাতে একগামিতা ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়।

কেন একগামিতা জরুরি হয়ে উঠেছিল

বৃহৎ মস্তিষ্ক, দীর্ঘ শিশুকাল এবং নিরাপত্তার চাহিদার কারণে একজন নারী সন্তানের লালনপালনে সঙ্গীর সহায়তা চাইত। সেই সময় এক পুরুষের অবদান পরিবারের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে।

অতএব, একগামিতা কোনও নৈতিক আদর্শ নয়, বরং বাস্তব পরিস্থিতির জন্য মানুষের টিকে থাকার কৌশল। তবে একগামী থেকেও অনেকেই সঙ্গীর প্রতি সর্বদা অনুগত থাকতে পারেননি। আমাদের নিকটতম একগামী প্রাণী হলো গিবন, যারা জঙ্গলের নির্দিষ্ট জায়গায় যুগলভাবে বসবাস করে।

ভালোবাসার রসায়ন: মস্তিষ্কের ভেতরের খেলা

ভালোবাসা শুধু আবেগ নয়, বরং রাসায়নিক প্রতিক্রিয়াও।

অক্সিটোসিন: “কাডল হরমোন” নামে পরিচিত, শারীরিক সংস্পর্শ ও আবেগময় মুহূর্তে নিঃসৃত হয় এবং দৃঢ় বন্ধন গড়ে তোলে।

ডোপামিন: নতুন কিছুর প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়। সম্পর্ক পুরনো হলে এর নিঃসরণ কমে যায়, ফলে প্রতিশ্রুতি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

এই কারণেই মানুষ একই সাথে আকর্ষণ, স্থিতিশীলতা ও নতুনত্বের টানাপোড়েনে ভোগে।

বহুবিবাহ, পলিজিনি ও পলিয়্যান্ড্রি

মানব সমাজে সম্পর্কের ধরন সবসময় একরকম ছিল না।

বহুবিবাহ (Polygamy): একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করে।

পলিয়্যান্ড্রি (Polyandry): একজন নারী একাধিক স্বামী রাখে। এখনও নেপাল, তিব্বতসহ কিছু অঞ্চলে এর প্রচলন আছে।

নৃতত্ত্ববিদ কেটি স্টার্কওয়েদারের মতে, নারীর জন্য পলিয়্যান্ড্রি অনেক সময় আর্থিকভাবে লাভজনক হতে পারে। আবার জেনেটিক বৈচিত্র্যের কারণে সন্তানদের টিকে থাকার সম্ভাবনাও বাড়ে।

পলিয়্যামোরি বনাম বাস্তবতা

যদিও পলিয়্যামোরি স্বাধীনতা ও খোলামেলা সম্পর্কের প্রতীক, তবুও বাস্তবে এটি বজায় রাখা সহজ নয়।

এতে প্রচুর সময়, মানসিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক সামর্থ্য প্রয়োজন।

একাধিক সম্পর্ক মানে একাধিক দায়িত্ব।

হিংসা ও অনিরাপত্তার মতো আবেগও প্রভাব ফেলে।

অ্যালাইনা জানান, তার ক্ষেত্রে হিংসা তখনই তৈরি হয় যখন সঙ্গী সত্য গোপন করে। খোলামেলা আলোচনায় সমস্যাগুলো কিছুটা হলেও কমে যায়।

তাহলে মানুষ কি স্বাভাবিকভাবে একগামী?

উত্তর হলো—হ্যাঁ ও না, দুটোই।

মানুষ সামাজিক জীব। তাদের সম্পর্ক নির্ভর করে সমাজ, পরিবেশ, অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ব্যক্তিগত চাহিদার ওপর। কারও কাছে একগামিতা হলো স্থিতিশীলতার প্রতীক, আবার কারও কাছে পলিয়্যামোরি মানে স্বাধীনতা ও বৈচিত্র্যের সুযোগ।

নৃতত্ত্ববিদ কেটি স্টার্কওয়েদার এক কথায় বললেন—“মানুষ বিবর্তিত হয়েছে নমনীয় হওয়ার জন্য। আর সেই নমনীয়তা সম্পর্কের কাঠামোতেও প্রতিফলিত।”

শেষকথা

মানুষের প্রেম ও সম্পর্ক আসলে একটি চলমান যাত্রা। একগামী হোক বা বহুগামী, মূল বিষয় হলো বোঝাপড়া, সততা ও মানসিক নিরাপত্তা। সম্পর্কের ধরন পরিবর্তিত হলেও মানুষের চাহিদা একই থাকে—ভালোবাসা, সহায়তা আর টিকে থাকার নিশ্চয়তা।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »