মানবসভ্যতার সূচনা থেকে মানুষ আদিম পূর্বপুরুষদের নিয়ে অগণিত প্রশ্ন করেছে। আদিম মানুষ কেমন ছিল, তারা কীভাবে জীবনযাপন করত, কোন অস্ত্র ব্যবহার করত—এসব বিষয় নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি উজবেকিস্তানের এক গুহা থেকে পাওয়া কিছু পাথরের টুকরো আমাদের পূর্ব ধারণাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
ওবি-রাখমত গুহার আবিষ্কার
উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওবি-রাখমত গুহা। এই গুহাতেই প্রত্নতাত্ত্বিকরা খুঁজে পেয়েছেন এবড়োখেবড়ো, ত্রিকোণাকার পাথরের টুকরো। প্রথমে এগুলোকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, কারণ বেশিরভাগই ভাঙা বা ক্ষয়ে যাওয়া অবস্থায় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য—পাথরগুলির বয়স প্রায় ৮০ হাজার বছর।
অস্ত্র নাকি সাধারণ পাথর?
গবেষকরা জানিয়েছেন, পাথরের সূচালো প্রান্ত দেখে বোঝা যায় এগুলো সাধারণ টুকরো নয়। এগুলো হতে পারে ছুরি, বর্শা কিংবা তীরের ফলা। ক্ষয়ের ধরন দেখে অনুমান করা হচ্ছে এগুলো শক্তিশালী আঘাতের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থাৎ, এগুলো নিছক ভাঙা পাথর নয়; বরং শিকারের অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে।
নিয়ানডার্থাল ও হোমো স্যাপিয়েন্সের যোগসূত্র
ঐ সময় মধ্য এশিয়ায় নিয়ানডার্থালরা বসবাস করত। তাদের পরবর্তী পর্যায়ে আসে হোমো স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষ। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, এই পাথরের টুকরোগুলি মূলত নিয়ানডার্থালদের হাতেই তৈরি হয়েছিল। তবে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না যে, প্রাথমিক পর্যায়ের হোমো স্যাপিয়েন্সরাও এগুলো তৈরি করতে পারে।
নিয়ানডার্থালদের শিকার দক্ষতা
নিয়ানডার্থালরা ছিল অভিজ্ঞ শিকারি। তাদের খাদ্যতালিকায় মাংসের প্রাচুর্য ছিল। তারা বাইসন, ঘোড়া, হাতি প্রভৃতি বৃহৎ প্রাণীর শিকার করত। মূলত বর্শাই ছিল তাদের প্রধান অস্ত্র। এতদিন পর্যন্ত ধারণা করা হতো, নিয়ানডার্থালরা তীর-ধনুক ব্যবহার করত না। কিন্তু নতুন পাওয়া এই পাথরের ফলাগুলি সেই ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
প্রচলিত ধারণার পরিবর্তন
এতদিন আমরা নিয়ানডার্থালদের সীমিত প্রযুক্তি ও সরল জীবনযাপনের অধিকারী হিসেবে চিনতাম। কিন্তু এই গুহার আবিষ্কার প্রমাণ করছে, তারা হয়তো আরও উন্নত অস্ত্র তৈরি করতে পারত। এমনকি সম্ভবত তীর-ধনুক ব্যবহার করার প্রাথমিক কৌশলও তারা জানত। যদি তা সত্যি হয়, তবে মানব বিবর্তনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
গবেষণার নতুন দিগন্ত
ওবি-রাখমত গুহার পাথরের টুকরো শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার নয়, বরং মানব ইতিহাসের রহস্য উন্মোচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। এটি আমাদের শিখিয়েছে, অতীত সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা সবসময় সত্য নাও হতে পারে। প্রতিটি নতুন আবিষ্কার আমাদের চিন্তাভাবনাকে প্রসারিত করে এবং মানব সভ্যতার অজানা কাহিনিগুলো উন্মোচনে সহায়তা করে।