শুল্ক কমলেও চাপ রয়েছে: নতুন হার ৩৬.৫ শতাংশ পর্যন্ত
আজ ৭ই অগাস্ট ২০২৫ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর নতুন শুল্কহার কার্যকর হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, এই নতুন হার অনুযায়ী বাংলাদেশের পণ্যের ওপর চূড়ান্ত শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
যদিও আপাতদৃষ্টিতে এটি শুল্ক হ্রাস বলে মনে হচ্ছে, তবে বাস্তবে বাংলাদেশের জন্য মোট শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৩৬.৫ শতাংশ, যা পূর্বের ১৬.৫ শতাংশ থেকে অনেকটাই বেশি।
কীভাবে পরিবর্তন এল শুল্ক নীতিতে?
এই নতুন শুল্কহার কার্যকরের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ আলোচনার প্রক্রিয়া। উল্লেখযোগ্যভাবে:
- ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।
- পরে জুলাই মাসে সেটি কমিয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
- বিভিন্ন কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক আলোচনার পর, বর্তমানে তা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা মূল শুল্কের অতিরিক্ত হিসেবে কার্যকর হবে।
এই পরিবর্তন সাময়িক স্বস্তি দিলেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এখনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
বিজিএমইএ-এর উদ্বেগ: বাড়তি শুল্কে রপ্তানিকারকরা বিপদে
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) জানিয়েছে, আগে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ১৬.৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো, এখন সেই হার দাঁড়াচ্ছে ৩৬.৫ শতাংশে। অর্থাৎ, ২০ শতাংশের একটি অতিরিক্ত শুল্ক যুক্ত হয়েছে, যা বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভিন্ন হারে প্রযোজ্য হবে।
এই পরিস্থিতিতে পোশাকশিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ অনেক সময় শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।
যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকই বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান অংশ
বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (EPB)-এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাকের বাজার। দেশটিতে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, তার ৮৬ শতাংশই তৈরি পোশাক।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের রপ্তানি পরিসংখ্যান:
- মোট রপ্তানি মূল্য: ৭.৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৭৫৪ কোটি ডলার)
- প্রধান পণ্য: গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাক
- বাজার: এককভাবে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য
এই বিশাল বাজারে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশি পণ্যের দাম বাড়বে, যা ক্রেতা হারানোর সম্ভাবনা তৈরি করছে।
কী প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে?
- রপ্তানি হ্রাস: উচ্চ শুল্কের কারণে অনেক ক্রেতা অন্য দেশের দিকে ঝুঁকতে পারে, ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যেতে পারে।
- পোশাক কারখানার চাপ: মূল্য প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে গেলে উৎপাদন খরচ কমানো লাগবে, যা শ্রমিকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- বৈদেশিক মুদ্রার সংকট: পোশাক খাত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস, তাই রপ্তানি কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহে টান পড়বে।
সম্ভাব্য করণীয় ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নিচের পদক্ষেপগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে:
- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি অথবা শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার (GSP) পুনর্বহালের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি।
- বিকল্প বাজার খোঁজা: ইউরোপ, কানাডা, জাপান ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ।
- মূল্য সংযোজন পণ্যে ঝুঁকে পড়া: উচ্চ মানসম্পন্ন ও ব্র্যান্ডেড পণ্যে ফোকাস করে লাভের মার্জিন বাড়ানো।
- পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়ন: শুধু পোশাক নয়, অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাত—যেমন চামড়া, আইটি, হস্তশিল্প ইত্যাদির রপ্তানিও বাড়াতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ছাড়া শুল্কসঙ্কট নিরসন সম্ভব নয়
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি বাংলাদেশের রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতির জন্য বড় একটি সতর্কবার্তা। এই সংকট শুধু ব্যবসায়ীদের নয়, দেশের শ্রমিক শ্রেণি ও সামগ্রিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি ও বহুমুখী রপ্তানি কৌশল, যাতে ভবিষ্যতের যেকোনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাধা আরও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়।