বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এসেছে। এবার থেকে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রতীক আর থাকছে না। সরকার সম্প্রতি সংশোধিত আইনের মাধ্যমে অধ্যাদেশ জারি করে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) স্থানীয় সরকার নির্বাচনসংক্রান্ত আইন সংশোধনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ফলে ভবিষ্যতে আর কোনো প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন কিংবা প্রতীকের আওতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
গত ১ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চারটি আলাদা অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। পরে ২৪ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন ও লেজিসলেটিভ এবং সংসদবিষয়ক বিভাগের সম্মতি নিয়ে তা সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়।
২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় থেকে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের প্রভাব বেড়ে যায়। তবে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গবেষক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের মতে, দলীয় প্রতীক থাকায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রকৃত অর্থে স্থানীয় না হয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতির ছায়াতলে চলে যাচ্ছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারের করা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন উভয়েই দলীয় প্রতীক বাতিলের পক্ষে সুপারিশ করে। কমিশনগুলো মনে করেছিল, দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়া হলে যোগ্য, সৎ এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিরা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়া ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলমুক্ত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। যারা সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন, তাঁরাও ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী হবেন। এর ফলে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং জনগণ প্রকৃত স্থানীয় নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।