নেপাল, হিন্দুরাষ্ট্র বিতর্ক ও মনীষা কৈরালা: অভিনেত্রীর মন্তব্য ঘিরে চর্চা

নেপাল হিন্দু রাষ্ট্র বিতর্ক ঘিরে মনীষা কৈরালার পুরনো মন্তব্য ভাইরাল, যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা।

নেপালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা আবারও আলোচনায়। এবার কারণ একটি পুরনো ভিডিও, যেখানে তিনি নেপালকে একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র” বলে উল্লেখ করেছিলেন। বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে উঠেছে এবং নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ভিডিওতে মনীষা কৈরালাকে বলতে শোনা যায়—“আমাদের নেপাল ছিল হিন্দুরাষ্ট্র। আমরা একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিলাম। আমাদের দেশে কখনও ধর্মীয় সংঘাত হয়নি, যুদ্ধ বা খুনোখুনি হয়নি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতাম। কিন্তু কেন সেই পরিচয় বদলে দেওয়া হল? আমার মনে হয় ষড়যন্ত্র করেই এটা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে কেবল একতা।”

এই বক্তব্য তিনি ২০২২ সালের নির্বাচনী সময়ে এক সাক্ষাৎকারে দিয়েছিলেন। তবে বর্তমানে নেপালের আন্দোলন, অস্থিরতা ও রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির কারণে তাঁর সেই মন্তব্য আবারও সামনে এসেছে।

নেপালে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি ও ন্যায়বিচারের দাবিতে তরুণরা আন্দোলনে নেমেছেন। আন্দোলনের মধ্যেই সংঘর্ষ, গুলি, রক্তপাত—সব মিলিয়ে দেশজুড়ে অস্থির পরিবেশ। মনীষা কৈরালা এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় রক্তমাখা বুটজুতোর ছবি শেয়ার করে লিখেছেন—
“দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হওয়া জনগণকে গুলি করে দমন করা হচ্ছে! আজ নেপালের জন্য ব্ল্যাক ডে।”

মনীষার ভিডিও ভাইরাল হতেই নেপালি সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।একাংশের দাবি—“তিনি বহু বছর আগে এই সত্যিটাই বলেছেন, যার তাৎপর্য এখন বোঝা যাচ্ছে।”অন্য অংশের তির্যক মন্তব্য—“ভূমিকন্যার মতো একজনের মুখে এই ধরনের মন্তব্য তরুণ প্রজন্মের গণআন্দোলনকে দুর্বল করে।”

সব মিলিয়ে, নেপালের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর মন্তব্য এখন রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

মনীষা কৈরালা শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তাঁর পরিবারও নেপালের রাজনীতিতে গভীরভাবে যুক্ত।তিনি নেপালি রাজনীতিবিদ প্রকাশ কৈরালার কন্যা।তাঁর দাদা বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা ১৯৫৯-১৯৬০ সালে নেপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

রাজনীতি তাঁর রক্তে মিশে থাকায়, নেপালের প্রতিটি আন্দোলন, প্রতিটি তরঙ্গ তিনি গভীরভাবে অনুভব করেন।

নেপাল দীর্ঘদিন হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই বিতর্ক চলছে।একদল মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষতা আধুনিক নেপালের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ।অপরদিকে, অনেকের মতে নেপালের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত পরিচয়কে খর্ব করা হয়েছে।মনীষা কৈরালার পুরনো মন্তব্য সেই বিতর্ককেই আবার উস্কে দিয়েছে।

 “ভূমিকন্যা” নামে পরিচিত মনীষা কৈরালা কেবল পর্দায় নয়, বাস্তবেও দেশের ব্যথা ও সংগ্রামের পাশে দাঁড়ান। মুম্বইয়ে থাকলেও তাঁর হৃদয় পড়ে থাকে নেপালের অশান্ত ভূমিতে। জনগণের আন্দোলন, তরুণদের রক্তদান—সবকিছু তাঁকে নাড়িয়ে দেয়।

মনীষা কৈরালার পুরনো মন্তব্য হয়তো সেই সময় তেমন সাড়া ফেলেনি, কিন্তু আজকের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামাজিক পরিস্থিতিতে তা নতুন তাৎপর্য বহন করছে। নেপাল কি আবারও হিন্দুরাষ্ট্র পরিচয়ে ফিরবে, নাকি ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়েই এগিয়ে যাবে—এই প্রশ্ন এখন আবার আলোচনায়।

অভিনেত্রীর বক্তব্যে যেমন বিভক্তি তৈরি হয়েছে, তেমনি নতুন প্রজন্মের কাছে এটি চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—নেপালের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে ঐক্য, ন্যায়বিচার ও গণমানুষের সত্যিকারের কণ্ঠস্বরের উপর।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »