আজকের সমাজে নারীরা যতই এগিয়ে যাক না কেন, যৌন হেনস্থা, অবদমন এবং কুপ্রস্তাবের মতো অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি যেন পিছু ছাড়ছে না। কর্মক্ষেত্র, রাস্তাঘাট কিংবা বিনোদন জগৎ—সবখানেই এই সমস্যা দৃশ্যমান। এমন বাস্তবতায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করলেন জনপ্রিয় বাঙালি অভিনেত্রী ঋত্বিকা সেন।
কেবল বিনোদন জগৎ নয়, হেনস্থা আছে সব ক্ষেত্রেই
দক্ষিণী ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা ঋত্বিকা বলেন, “কাস্টিং কাউচ শুধু দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতেই নয়, সব ইন্ডাস্ট্রিতেই রয়েছে। আমরা সবাই জানি সেটা।” যদিও তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সরাসরি খারাপ না হলেও, কাছের মানুষদের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বুঝেছেন পরিস্থিতির ভয়াবহতা।
ঋত্বিকা জানান, তাঁর বহু বান্ধবী রয়েছেন যারা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তারাও নানা রকমের আপত্তিকর পরিস্থিতি সামলেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁর উপলব্ধি, “মহিলা মানেই অনেকের চোখে দুর্বল, অনায়াসে অবদমনযোগ্য এক চরিত্র।”
‘সমাজ যেমন, বিনোদন জগতও তারই অংশ’
অভিনেত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, “বিনোদন জগৎ বা যে কোনো ইন্ডাস্ট্রি এই সমাজেরই অংশ। তাই সমাজে যদি নারীর নিরাপত্তার ঘাটতি থাকে, তবে সেটা কর্মক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হবে।”
ঋত্বিকার স্কুলজীবনের বান্ধবীদের কথায় উঠে এসেছে, সাধারণ কর্মক্ষেত্রেও নারীরা যৌন হেনস্থার শিকার হন। অনেক সময় তা সরাসরি না হলেও মানসিকভাবে অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়।
কুপ্রস্তাব এলে কীভাবে প্রতিবাদ করেন ঋত্বিকা?
ঋত্বিকা বলেন, “আমি সপাটে জবাব দিই। যাঁরা খারাপ মানসিকতা পোষণ করেন, তাঁরা হয়তো এমন পরিবেশেই বড় হয়েছেন। তারা ভাবেন, মহিলা মানেই সম্মতি ছাড়াই গায়ে হাত দেওয়া যায়। আমি স্পষ্টভাবে প্রতিবাদ করি, তাই তেমন অভিজ্ঞতা হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় মেয়েরা প্রায়ই হেনস্থার শিকার হন। আমি কখনও তা সহ্য করিনি, বরং মুখের উপর প্রতিবাদ করেছি।”

শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যদের জন্যও সচেতন
সরাসরি হেনস্থার শিকার না হলেও ঋত্বিকা আশপাশে অনেক নারীকে এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে দেখেছেন। কারও কারও চোখে অশ্রু, কেউবা ভেঙে পড়েছেন। তাঁর অভিমত, “কিছু মানুষ ভাবেই নেয়, নারী মানেই ছুঁয়ে দেওয়া যায়। এই মানসিকতা অত্যন্ত বিপজ্জনক।”
এ ধরনের মানুষদের সঙ্গে সামান্য কথাবার্তাতেই তাদের মানসিকতা স্পষ্ট হয়ে যায়, বলেই মনে করেন তিনি। তাই তাঁদের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো—সরাসরি ও স্পষ্ট প্রতিবাদ।
‘নারীরা দুর্বল নয়’—একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
ঋত্বিকার মতে, “আমি একজন কর্মরতা নারী। গাড়ি চালাতে পারি, নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারি। পুরুষেরা যা পারে, আমরাও তা পারি। আমাদের মধ্যে কোনো দুর্বলতা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “যাঁদের মানসিকতা খারাপ, তাঁদের বড় হয়ে ওঠা তো আর বদলানো যাবে না। কিন্তু আমাদের প্রতিবাদ থেমে গেলে চলবে না।” এই বার্তা আজকের সমাজে একান্ত প্রয়োজন।