ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস শতবর্ষেরও বেশি পুরোনো। এই যাত্রায় দর্শক পেয়েছে অসংখ্য স্মরণীয় সিনেমা, কিংবদন্তি তারকা আর অনন্য সব গল্প। হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালয়ালম, কন্নড়—প্রতিটি ভাষার সিনেমাই ভারতীয় চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। বিশ্বজুড়ে ভারতীয় সিনেমার চর্চা চলে, প্রতি বছর অসংখ্য ছবি মুক্তি পায়, কিন্তু তবুও কিছু কিছু সিনেমা এমন থাকে যা ইতিহাস গড়ে দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে এমনই এক সিনেমা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে—‘সিংহ’। ছবিটির নামের মধ্যেই আছে রোমাঞ্চ আর শক্তির ইঙ্গিত। দক্ষিণ ভারতীয় প্রভাব থাকা এই সিনেমা একসঙ্গে তামিল, তেলেগু, মালয়ালম, কন্নড় ও হিন্দি ভাষায় মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু কী এমন ঘটেছে যে এই ছবিকে বলা হচ্ছে ইতিহাস?
ভারতীয় সিনেমায় এই প্রথমবার পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে আসল সিংহ। আগে গল্পে বাঘ, সিংহ কিংবা অন্য বন্যপ্রাণী দেখাতে ভিজ্যুয়াল এফেক্ট বা প্রশিক্ষিত প্রাণীর উপর নির্ভর করা হতো। কিন্তু পরিচালক কে সি রবি দেবন ভিন্ন পথে হাঁটলেন। তিনি আসল সিংহকে সামনে এনে পুরো গল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এর ফলে সিনেমা তৈরি যেমন কঠিন হয়েছিল, তেমনি দর্শকদের জন্যও অপেক্ষা করছে এক নতুন অভিজ্ঞতা।
সিংহের সঙ্গে অভিনয় করা সহজ বিষয় নয়। ছবির কাহিনি অনেক অভিনেত্রীকে আকর্ষণ করলেও, আসল সিংহের সামনে দাঁড়িয়ে কাজ করার সাহস খুব কমজনই দেখিয়েছেন। অবশেষে সাহসী পদক্ষেপ নিলেন অভিনেত্রী শ্রিতা রাও। তিনি শুধু সিংহের সামনে দাঁড়িয়েই অভিনয় করেননি, বরং দারুণ অভিনয়ের মাধ্যমে চরিত্রে প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন। পরিচালকও তাঁর প্রশংসা করতে দ্বিধা করেননি।
যেহেতু ছবিতে আসল সিংহ ব্যবহার করা হয়েছে, তাই শুটিংয়ের পুরো সময় ছিল কঠোর নিয়ম আর নিরাপত্তার ব্যবস্থা। প্রাণী সুরক্ষা আইন মেনে প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হয়েছে বলে পরিচালক ও প্রযোজক আশ্বস্ত করেছেন। এতে একদিকে ছবির মান বজায় রাখা গেছে, অন্যদিকে প্রাণীর সুরক্ষাও নিশ্চিত হয়েছে।
ভারতীয় সিনেমায় আগে কখনো এভাবে আসল সিংহকে কেন্দ্র করে গল্প বলা হয়নি। এই ছবিটি শুধু প্রযুক্তিগত দিক থেকেই নয়, সাহস আর নতুনত্বের দিক থেকেও আলাদা হয়ে উঠেছে। দর্শকরা এখানে ভিজ্যুয়াল এফেক্টের ভরসায় তৈরি কোনো প্রাণী নয়, সত্যিকারের সিংহকে দেখতে পাবেন। এটাই ‘সিংহ’কে করে তুলেছে অনন্য।