মানুষের জীবনে বয়স একসময় সীমাবদ্ধতা হয়ে দাঁড়ায়। ৭০–৮০ বছরের পর অনেকেই শারীরিক দুর্বলতার কারণে বাড়ির বাইরে হাঁটতেও কষ্ট পান। কিন্তু জাপানের কোকিচি আকুজাওয়া এই ধারণাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছেন। তাঁর বয়স এখন ১০২ বছর, আর এই বয়সে তিনি জাপানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ফুজি জয় করে দেখিয়েছেন বয়স আসলেই কেবল একটি সংখ্যা।
১৯২৩ সালে জন্ম নেওয়া কোকিচি পেশায় ছিলেন গৃহপালিত পশু চরানোর মানুষ। ছোটবেলা থেকেই পাহাড় ছিল তাঁর নেশা। অবসর পেলেই তিনি পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতেন। বয়স যতই বাড়তে থাকে, শারীরিক শক্তি কমতে থাকে, কিন্তু কোকিচির মনোবল কোনোদিনও কমেনি। তাঁর কাছে পাহাড় মানে ছিল জীবনের প্রাণশক্তি।
মাউন্ট ফুজি জাপানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং একইসঙ্গে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। অনেকেই ফুজির নাম শুনেই ভয় পান, কিন্তু কোকিচির কাছে এটি ছিল চ্যালেঞ্জ আর স্বপ্ন পূরণের জায়গা। ৯৬ বছর বয়সে তিনি একবার এই শৃঙ্গ জয় করেছিলেন। চিকিৎসকরা হৃদরোগের জন্য তাঁকে সতর্ক করেছিলেন, পরিবারও পাহাড়ে উঠতে মানা করেছিলেন। কিন্তু পাহাড় ছাড়া তাঁর জীবন ছিল অকল্পনীয়।
১০২ বছর বয়সেও মাউন্ট ফুজি জয় কোনো সহজ ব্যাপার নয়। তবে কোকিচি হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি প্রতি সপ্তাহে পাহাড়ে ওঠার অনুশীলন চালিয়ে গেছেন নিয়মিত। এই প্রস্তুতির ফলেই তিন দিনে তিনি ১২,৩৮৮ ফুট উচ্চতায় পৌঁছে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নাতনি এবং আরেকজন সঙ্গী।
কোকিচি আকুজাওয়ার গল্প শুধু একটি পাহাড় জয় নয়, বরং এটি মানুষের সীমাহীন ইচ্ছাশক্তির উদাহরণ। হৃদরোগ, বয়সজনিত সমস্যা কিংবা চারপাশের বারণ—কোনো কিছুই তাঁকে আটকাতে পারেনি। তিনি প্রমাণ করেছেন, বয়স যদি মনকে জয় না করতে পারে, তবে শরীরও লড়াই চালিয়ে যেতে পারে।
১০২ বছর বয়সেও মাউন্ট ফুজি জয় করে কোকিচি আকুজাওয়া বিশ্ববাসীকে দেখালেন যে মানুষের শক্তি ও সাহসের কোনো বয়সসীমা নেই। পাহাড় তাঁর প্রাণ, আর সেই প্রাণশক্তিই তাঁকে আজও সক্রিয় রেখেছে। তাঁর এই সাফল্য নতুন প্রজন্মকে শেখায়—জীবনে স্বপ্নপূরণের জন্য কখনোই দেরি হয় না।