এ বি এম সাহিদুল ইসলাম বাচ্চু: যশোরের ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র

যশোরের ফুটবল রেফারি বাচ্চু জীবনী ও ক্রীড়া অবদান জানুন। খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক ও সংগঠক হিসাবে তার অসাধারণ ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।

যশোরের কাজীপাড়ায় ১৯৬৩ সালে জন্ম নেন ফুটবল ও হকির ক্রীড়াবিদ, প্রশিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক রেফারি এ বি এম সাহিদুল ইসলাম বাচ্চু। তাঁর পিতা আমির আলী, আট ভাই-বোনের মধ্যে বাচ্চু ছিলেন তৃতীয় সন্তান। শিক্ষাজীবনে তিনি এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করেন। কর্মজীবনে ব্যবসাকে বেছে নিলেও তাঁর প্রাণের টান ছিল সবসময় ক্রীড়াক্ষেত্রের প্রতি।

খুব অল্প বয়সেই খেলাধুলার প্রতি গভীর অনুরাগ জন্মে তাঁর মনে। ১৯৬৭ সালে যশোর মুসলিম একাডেমি স্কুলে অধ্যয়নকালে তিনি হকি খেলায় অংশগ্রহণ করেন। মাত্র দুই বছর পর, ১৯৬৯ সালে খুলনা বিভাগীয় রানার্স-আপ দলের হয়ে কৃতিত্ব অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি স্কুল ফুটবলে অংশ নেন। এরপর ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত যশোরের ঐতিহ্যবাহী “কিশোর ক্লাব”-এর হয়ে নিয়মিত খেলেন।

জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের অধীনে যশোর জেলা সশস্ত্র ৫৫ ডিভিশন দল এবং ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেন তিনি। কেবল খেলোয়াড় নন, প্রশিক্ষক হিসেবেও তিনি তরুণদের মাঝে ক্রীড়া চেতনা জাগিয়ে তুলতে সফল হন।

সংগঠক হিসেবেও তাঁর অবদান অনন্য। তিনি “ডলফিন ক্লাব”, “ভৈরবী যুব সংঘ” এবং “যশোর জেলা ফুটবল রেফারি সমিতি”-র কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া “যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থা”-য় হকি পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। তিনি “মুসলিম স্পোর্টিং ক্লাব”-এর সভাপতি এবং প্রিয় প্রতিষ্ঠান “মুসলিম একাডেমি স্কুল”-এর সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।

১৯৮২ সালে ফুটবল রেফারি হিসেবে তাঁর প্রশিক্ষণ যাত্রা শুরু হয়। চার বছর পর, ১৯৮৬ সালে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণির রেফারি হিসেবে উত্তীর্ণ হন। কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে ১৯৯৫ সালে প্রথম শ্রেণির রেফারি হওয়ার সম্মান অর্জন করেন।

২০০০ সালে তিনি ফিফার স্বীকৃতি পান এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেন। ২০০২ সালে জাপান-কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের এএফসি নবম গ্রুপ বাছাই পর্বে চীন বনাম কম্বোডিয়ার ম্যাচে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর কলকাতায় এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ বাছাই পর্বের গ্রুপ-৪ ম্যাচ এবং এএফসি লীগ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০০২/২০০৩-এ কোরিয়া বনাম ভারতের ম্যাচও তিনি পরিচালনা করেন।

২০০৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপেও তিনি খেলার দায়িত্ব পালন করেন, যা বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

রেফারি ও সহকারী রেফারি হিসেবে তিনি পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নেন। পাশাপাশি ১৯৮৮ সাল থেকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি শেরে বাংলা টুর্নামেন্ট, সোহরাওয়ার্দী কাপ, বিমান কাপ, জাতীয় লীগ ও নিটল-টাটা টুর্নামেন্ট পরিচালনা করেছেন।

এ বি এম সাহিদুল ইসলাম বাচ্চু শুধু একজন খেলোয়াড় বা রেফারি ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক ও প্রশিক্ষক। যশোরের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তরুণ প্রজন্মের মাঝে তিনি ক্রীড়ার প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তুলেছিলেন এবং ফুটবল ও হকির প্রসারে রাখেন অমূল্য অবদান।

বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এ বি এম সাহিদুল ইসলাম বাচ্চু একটি গৌরবময় নাম। তাঁর অদম্য প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও নেতৃত্ব যশোরসহ সারাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খেলোয়াড় ও সংগঠকরা তাঁর জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারবে।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »