যশোরের গর্ব ফুটবলার মোঃ মাসুদুর রহমান টনি: এক জীবন্ত কিংবদন্তি

যশোরের ফুটবলার মাসুদুর রহমান জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড়, সংগঠক ও প্রশিক্ষক হিসেবে দেশের ফুটবলে অসামান্য অবদান রেখেছেন।

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে যশোরের নাম সর্বদা উজ্জ্বল। সেই ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন মোঃ মাসুদুর রহমান টনি। তিনি শুধু জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলারই নন, বরং একজন ক্রীড়া সংগঠক, প্রশিক্ষক এবং ফুটবল উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ এক পথপ্রদর্শক।

১৯৭১ সালের ৩ নভেম্বর যশোরে জন্মগ্রহণ করেন টনি। তাঁর পিতা হাজী মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। শৈশব থেকেই খেলাধুলার প্রতি অদম্য আগ্রহ তাঁকে ফুটবলের পথে নিয়ে আসে। শিক্ষা জীবনে তিনি এইচএসসি পাশ করেন যশোর সরকারি সিটি কলেজ থেকে।

টনির ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৮৫ সালের আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। ১৯৮৮ সালে কোচ আলমগীরের তত্ত্বাবধানে হামিদপুরে নিয়মিত অনুশীলন শুরু করেন। একই বছর তাঁকে যশোরের ঐতিহ্যবাহী টাউন ক্লাবে খেলানোর সুযোগ করে দেন কোচ আলমগীর। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর ফুটবল যাত্রার প্রকৃত অধ্যায়।

১৯৯১ সালে জাতীয় পর্যায়ে পা রাখেন টনি। ইমদাদুল হক সাচ্চুর সহায়তায় তিনি ঢাকার ওয়ারী ক্লাবে যোগ দেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে খেলেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সাল থেকে টানা সাত বছর আরামবাগ ক্লাবে অসাধারণ দক্ষতার প্রমাণ রাখেন।১৯৯৫ সালে ভারতের সিকিম গোল্ডকাপে রানার্সআপ হওয়ার পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পান।১৯৯৭ সালের ফেডারেশন কাপে আরামবাগ ক্লাব রানার্সআপ হলে টনি সেরা গোলকিপারের পুরস্কার জিতে নেন।যশোর লীগে তিনি ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত অবিচল পারফরম্যান্স দেখান।২০০০ সালে জাতীয় লীগে চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলেন।

১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ যুবদলে সুযোগ পান। মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দল দক্ষিণ কোরিয়ার মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। সেখানেই টনি সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান।

১৯৯৭ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ডাক পান তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলে। একই বছরে নেপালে অনুষ্ঠিত প্রথম সাফ ফুটবলে অংশ নেন এবং বাংলাদেশ পঞ্চম স্থান অর্জন করে।

টনি ফুটবল ক্যারিয়ারে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ একাধিক দেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

ফুটবল জীবনে টনি বিভিন্ন কিংবদন্তি কোচ ও খেলোয়াড়দের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাচ্চু, আলমগীর, গাজী ওয়াজেদ, ইউসুফ, ফারুক, মালা, সাদেক, বাবলু, সোয়াব, সামির সাকিব এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোচ অটোফিষ্টারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হলেও ফুটবলের প্রতি তাঁর ভালোবাসা কমেনি। বর্তমানে তিনি শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির উপ-পরিচালক ট্রেনিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড় তৈরির লক্ষ্যে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

যশোরের ক্রীড়াঙ্গনে মোঃ মাসুদুর রহমান টনি এক অনন্য নাম। তাঁর সংগ্রাম, পরিশ্রম ও সাফল্য প্রমাণ করে যে প্রতিভা এবং অধ্যবসায় থাকলে যেকোনো জায়গা থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। তিনি শুধু একজন ফুটবলার নন, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণার প্রতীক।

✍️ জীবনী তথ্যসংগ্রহ: সাজেদ রহমান | যশোর 📅 প্রকাশকাল: ০৪-সেপ্টেম্ববর ২০২৫

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »