বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে যেসব ক্রীড়াবিদ তাঁদের মেধা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে আলোকিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম খোকন অন্যতম। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৩ সালের ৪ এপ্রিল, যশোর শহরের ঐতিহাসিক পুরাতন কসবার পালপাড়ায়। তাঁর পিতা ছিলেন মোঃ ইদরিস আলী মিয়া, যিনি সন্তানকে নৈতিকতা ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠার প্রেরণা যুগিয়েছিলেন।
খেলাধুলার পাশাপাশি জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষাক্ষেত্রেও সমান মনোযোগী ছিলেন। তিনি যশোর এম এম কলেজ থেকে বি.কম ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষা জীবনের সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলার প্রতি তাঁর আগ্রহ একে একে তাঁকে যশোর থেকে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আলোচিত নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম খোকনের ক্রীড়াজীবনের শুরু হয় যশোরের খ্যাতনামা সংগঠন **“স্বর্ণরেণু ক্রীড়া সংস্থা”**র মাধ্যমে। এখান থেকেই তিনি ভলিবল এবং ওয়াটারপোলো খেলায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তাঁর ক্রীড়া প্রতিভাকে শাণিত করেন দেশের ক্রীড়া জগতের গুণী প্রশিক্ষকরা।ওয়াটারপোলোতে প্রশিক্ষক ছিলেন মোঃ আব্দুল মান্নান।ভলিবলে তাঁকে প্রশিক্ষণ দেন আখিরুজ্জামান মন্টু ও শহীদ উদ্দিন শহিদ।
তাঁদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও জাহাঙ্গীর আলমের নিরলস অনুশীলন তাঁকে দ্রুত একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত করে তোলে।
ভলিবল ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় খেলা। তিনি যশোর থেকে শুরু করে ঢাকার ভলিবল মঞ্চেও নিজের স্বাক্ষর রেখেছেন।ঢাকা লীগে খেলেছেন: ঢাকা সবুজ সংঘ, মিতালী সংঘ, তিতাস ক্লাব, যশোর লীগে খেলেছেন: ইয়ং যুব ক্রীড়া সংস্থা, পরবর্তীতে এম আর এস আর ক্লাব।
এছাড়া যশোর পুলেরহাট স্কুলের ভলিবল দলে ক্রীড়া চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ এক যুগ ধরে যশোর জেলা ভলিবল দলের কৃতি খেলোয়াড় হিসেবে ভূমিকা রাখেন। তাঁর নৈপুণ্যে যশোর জেলা ভলিবল দলের সাফল্য একাধিকবার সমৃদ্ধ হয়।
ভলিবলের পাশাপাশি ওয়াটারপোলোতেও তিনি সমান পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন। যশোর জেলা দলের হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ওয়াটারপোলো খেলোয়াড় হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। ক্রীড়া ইতিহাসে দেখা যায়, ওয়াটারপোলোতে তাঁর দৃঢ় শারীরিক ক্ষমতা এবং কৌশলগত খেলায় যশোর দল প্রতিপক্ষকে প্রায়ই চাপে ফেলতে সক্ষম হতো।
কেবল ভলিবল ও ওয়াটারপোলোতেই নয়, হ্যান্ডবল খেলায়ও জাহাঙ্গীর আলমের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তিনি যশোর হ্যান্ডবল লীগে এস আর এস আর ক্লাবের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন। এটি তাঁর বহুমুখী প্রতিভার প্রমাণ দেয়।
প্রায় এক যুগ ধরে জাহাঙ্গীর আলম ভলিবল ও ওয়াটারপোলোতে যশোর জেলা দলের জন্য অমূল্য অবদান রেখে গেছেন। খেলাধুলার প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা এবং অদম্য চেষ্টাই তাঁকে ক্রীড়াঙ্গনে সফলতার শিখরে পৌঁছে দেয়।
তাঁর খেলার ধরনে দেখা যেত শক্তিশালী সার্ভিস, চমৎকার ব্লকিং এবং দলকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষমতা। একইসাথে তিনি ছিলেন একাধারে একজন শৃঙ্খলাবদ্ধ খেলোয়াড় ও আদর্শ ক্রীড়ানায়ক।
যশোর সবসময়ই বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের একটি শক্তিশালী কেন্দ্র। আর সেই যশোরকে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে জাহাঙ্গীর আলম খোকনের মতো খেলোয়াড়দের অবদান অপরিসীম।তাঁর খেলার মাধ্যমে যশোর জেলা দল শুধু সফলতাই অর্জন করেনি, বরং পরবর্তী প্রজন্মের খেলোয়াড়রা অনুপ্রাণিত হয়েছে।যশোরের বিভিন্ন ক্লাব ও স্কুলে তিনি যে সময় খেলেছেন, সেটি স্থানীয় ক্রীড়া আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।তাঁর নেতৃত্বে যশোরের ভলিবল ও ওয়াটারপোলো দল অনেক প্রতিযোগিতায় গৌরব অর্জন করে।
জাহাঙ্গীর আলম সবসময় তাঁর প্রশিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। আখিরুজ্জামান মন্টু, শহীদ উদ্দিন শহিদ এবং আব্দুল মান্নানের মতো প্রশিক্ষকদের অধীনে খেলার মাধ্যমে তিনি শিখেছিলেন শৃঙ্খলা, কৌশল ও দলগত সমন্বয়।
সহখেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অনন্য। তিনি সবসময় দলের সবার সঙ্গে কাজ করতেন, নতুন খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতেন এবং একজন টিম প্লেয়ার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম খোকনের ক্রীড়াজীবন শুধুমাত্র ভলিবল বা ওয়াটারপোলোতে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তিনি যশোর তথা বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। তাঁর জীবন থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের খেলোয়াড়রা শিখতে পারে যে নিয়মিত অনুশীলন, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং দৃঢ় মনোবলই সাফল্যের আসল চাবিকাঠি।
বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতে তাঁর অবদানকে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি এবং বিশ্বাস করি যে তাঁর পথ অনুসরণ করে নতুন প্রজন্ম আরও সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
✍️ জীবনী ও তথ্যসংগ্রহ: সাজেদ রহমান | যশোর 📅 প্রকাশকাল: ১৮ আগস্ট ২০২৫