কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাসহ জাতীয় নিম্নতম মূল মজুরি ৩০ হাজার টাকা ঘোষণা, গেজেট বাস্তবায়নে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান

৩০ হাজার টাকা মজুরি দাবি, গেজেট বাস্তবায়ন ও শ্রমিকদের ঐক্য গড়ার আহ্বানে যশোরে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

শ্রমিক অধিকার গেজেট বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপট

২০২৫ সালের মে ঘোষিত গেজেটে হোটেল সেক্টরের জন্য জাতীয় নিম্নতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা দেশের শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য দাবির একটি বড় সাফল্য। কিন্তু এখনও এই গেজেট বাস্তবায়নে গড়িমসি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ অবস্থায় যশোর জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন সহ অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনসমূহ ঐক্যবদ্ধ হয়ে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়নের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।

বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ: দাবির প্রতি সংহতির বহিঃপ্রকাশ

২৮ জুলাই ২০২৫, সোমবার দুপুর ১২:৩০টায় যশোর শহরের পাইপপট্টি মোড় থেকে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে দড়াটানা শহীদ চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। এই কর্মসূচির আয়োজন করে যশোর জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মজিবর রহমান খান মহারাজ, এবং বক্তব্য রাখেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস, উপসচিব আইয়ুব হোসেন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা সকলেই গেজেট বাস্তবায়নের দাবি এবং শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

৩০ হাজার টাকা জাতীয় নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়নের প্রাসঙ্গিকতা

বর্তমান বাজারদর এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায়, একটি সদস্যের পরিবারের জীবনধারণের জন্য ৩০ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি অপরিহার্য। এটি শুধু কোনো আর্থিক সুবিধা নয়, বরং এটি একটি মানবিক এবং সামাজিক অধিকার

শ্রমিক নেতারা উল্লেখ করেন, হোটেল সেক্টরে কাজ করা শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে অসচল মজুরি স্কেলে কাজ করে আসছেন। অথচ তারা প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত সময়, অনিরাপদ পরিবেশ এবং কোনো চাকরির নিশ্চয়তা ছাড়া শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। এই গেজেট বাস্তবায়িত হলে শ্রমিকরা ন্যায্য মর্যাদা ফিরে পাবে।

নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র সার্ভিসবুক প্রদানের দাবির গুরুত্ব

একজন শ্রমিকের চাকরি নিরাপত্তা এবং সঠিক অধিকার নিশ্চিত করতে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র এবং সার্ভিসবুক অপরিহার্য। কিন্তু অধিকাংশ হোটেল শ্রমিক এখনও এই মৌলিক নথিপত্র থেকে বঞ্চিত। এ কারণে দুর্ঘটনার সময় ক্ষতিপূরণ, চাকরিচ্যুতি, ছুটি কিংবা আইনগত সহায়তা পাওয়াও প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়

এই অবস্থার পরিবর্তনে নেতৃবৃন্দ প্রতিটি শ্রমিকের জন্য সরকারি অনুমোদিত ফরমেটে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র সার্ভিসবুক প্রদানের জোর দাবি জানান।

ঘণ্টা শ্রম অতিরিক্ত কাজের দ্বিগুণ মজুরি বাস্তবায়নের দাবি

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী, ঘণ্টার বেশি কাজ করালে তা অতিরিক্ত শ্রম (Overtime) হিসেবে গণ্য হয় এবং তার জন্য দ্বিগুণ মজুরি প্রদান করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের হোটেল শ্রমিকদের অধিকাংশই দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করে থাকলেও অতিরিক্ত পারিশ্রমিক পান না

নেতৃবৃন্দের মতে, এই অনিয়ম শুধু আইন লঙ্ঘন নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। অতএব, গেজেট অনুসারে, ঘণ্টা শ্রম নিশ্চিতকরণ এবং অতিরিক্ত সময়ের জন্য যথাযথ পারিশ্রমিক প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে

করোনা মহামারির পর অধিকার হরণের বাস্তবতা

নেতারা বলেন, করোনা মহামারির সময় শ্রমিকরা যখন সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে, তখন মালিকপক্ষ বেতন কাটা, চাকরি থেকে বাদ দেওয়া, ছাঁটাই সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করার অজুহাতে শ্রমিকদের উপর দমন চালিয়েছে। অথচ শ্রমিকদের পক্ষ থেকে নানাবিধ ত্যাগ মানবিক সহায়তা তখন প্রদান করা হয়েছিল।

আজকের এই আন্দোলন হলো করোনার পরে শ্রমিক অধিকার পুনঃস্থাপন গেজেট বাস্তবায়নের প্রতীক। এটা কোনো একদিনের ক্ষোভ নয়, বরং বহুদিনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রতিবাদ

পবিত্র ঈদুল আজহায় এক মাসের মজুরির ৎসব বোনাস দাবি

শ্রমিকরা দাবী করেছেন, ঈদ ৎসবের সময়ে কমপক্ষে এক মাসের মজুরির সমপরিমাণ বোনাস প্রদান করতে হবে। এটি শুধু ধর্মীয় ৎসব উদযাপন নয়, বরং শ্রমিকদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ঈদের সময় পরিবার নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চাইলে এই বোনাস অপরিহার্য। বহু মালিক পক্ষ এখনও এই দাবি মানতে নারাজ। অথচ গেজেট অনুযায়ী এটি আইনগতভাবে বাস্তবায়নযোগ্য একটি অধিকার

গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান শ্রম আইনে অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বাধীনতা সংগঠনের অধিকারে বাধা রয়েছে। সেকারণে শ্রমিকরা আন্দোলন করতে ভয় পায়, তাদের ছাঁটাইয়ের ভয়, হয়রানির ভয় থেকে যায়। নেতারা বলেন, একটি গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন না হলে শ্রমিক অধিকার কখনও সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে না।

গণতান্ত্রিক শ্রম আইন মানে হলো—

  • শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা
  • যৌক্তিক ও আইনি পথে দাবি জানানোর নিশ্চয়তা
  • শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ ন্যায্য মজুরি নিশ্চয়তা

শ্রমিকদের ঐক্য ছাড়া অধিকার অর্জন সম্ভব নয়

নেতৃবৃন্দ বারবার জোর দিয়ে বলেন, এখন আর আলাদা হয়ে আন্দোলনের সময় নেই। আমাদের সকল শ্রমিককে বুঝতে হবে— ঐক্যবদ্ধ না হলে অধিকার বাস্তবায়ন হবে না

শ্রমিকদের উচিত—

  • নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে গঠনমূলক সংলাপে যুক্ত হওয়া
  • প্রত্যেক শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে একতা গড়ে তোলা
  • আন্দোলনের সময় মালিক পক্ষ ও প্রশাসনের কাছেও স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে, শ্রমিকদের দাবিতে কোনো ছাড় নয়

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »