অভয়নগরে আতাই নদীর বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা
যশোরের অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের শান্তিপুর ও রামনগর গ্রামে আতাই নদীর বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিনের অব্যাহত বর্ষণ এবং নদীতে জোয়ারের পানির প্রবল চাপের কারণে নদীর দুর্বল বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার অংশ ধসে যায়। ফলে দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ফসলি জমি, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট—সবই পানিতে তলিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
নদীর জোয়ার ও বর্ষণে বাঁধ ভেঙে প্লাবন
স্থানীয়রা জানান, ভৈরব নদের ত্রিমোহনী থেকে মজুদখালী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত আতাই নদী, বর্ষাকালে প্রবল স্রোত এবং জোয়ারের পানিতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত সোমবার থেকে শান্তিপুর গ্রামের ঋষিপাড়া অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরনো ও দুর্বল বাঁধ দিয়ে নদীর পানি ঢুকতে থাকে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পানি ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে।
মাছের ঘের, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট ডুবে গেছে
শান্তিপুরের বাসিন্দা মিলন বিশ্বাস জানান, “আতাই নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় শত শত পরিবার এখন পানির নিচে। আমাদের মাছের ঘের ভেসে গেছে, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, এমনকি গ্রামের মাটির রাস্তাও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।”
রামনগরের আরেক বাসিন্দা সেলিম রহমান অভিযোগ করে বলেন, “প্রতিবছর বর্ষাকালে এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু কাগজে-কলমে সংস্কারের কথা বলে, বাস্তবে কাজ হয় না।”
টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জোরালো
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মনে করছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে দ্রুত ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা ছাড়া বিকল্প নেই। সিদ্ধিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আবুল কাশেম বলেন, “আমার ইউনিয়নের দুইটি গ্রাম এখন পুরোপুরি প্লাবিত। আমি উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করছি যেন দ্রত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
প্রশাসনের আশ্বাস ও উদ্যোগ
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম শীল বলেন, “জোয়ারের পানিতে প্লাবিত দুইটি গ্রামে আমরা নজর রাখছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে বিষয়টি অবহিত হয়েছে এবং তারা প্রাথমিকভাবে দুর্বল বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নিচ্ছে। বর্ষা শেষে পূর্ণাঙ্গ ও টেকসই সংস্কার করা হবে বলে তারা জানিয়েছে।”
সমস্যার মূল কারণ কী?
বাঁধ ভেঙে প্লাবনের ঘটনায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে:
- দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া বাঁধ
- অতিরিক্ত বর্ষণ ও নদীর পানির চাপে দুর্বল বাঁধের ভেঙে পড়া
- নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস
- স্থানীয়ভাবে বাঁধ সংরক্ষণের তদারকি না থাকা
করণীয় ও সমাধান
এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:
- দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও পূর্ণাঙ্গ ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিকল্পনা
- বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বাঁধ মেরামত
- স্থানীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে বাঁধ পর্যবেক্ষণ
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি
উপসংহার
যশোরের অভয়নগরের এই প্লাবন আবারও দেখিয়ে দিল, দুর্বল বাঁধের উপর নির্ভর করে নদীপারের মানুষের জীবন যাপন কতটা অনিশ্চিত। শুধুমাত্র টেকসই বাঁধ নির্মাণ, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রশাসনিক তদারকিই পারে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান আনতে। এখন সময়, প্রতিশ্রুতি নয়, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।