বাংলার প্রকৃতি মানেই ঋতুবৈচিত্র্যের অনন্য সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্যের সঙ্গেই মিশে আছে সংস্কৃতি ও শিল্পকলা। শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোর শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো শরৎ বন্দনা উৎসব। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যশোর আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গানের সুর আর নৃত্যের ছন্দে মেতে উঠেছিল পুরো মিলনায়তন।
“ওরে আকাশ ভেঙে বাহিরকে আজ নেব রে লুটে করে”—এই প্রতীকী স্লোগানে শরতের শুভ্রতা ও আনন্দকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় দর্শকদের মাঝে। একক ও দ্বৈত গান, শিশু-কিশোরদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা এবং নৃত্যের মেলবন্ধনে তৈরি হয় এক অপূর্ব আবহ। ছুটির দিনে এমন আয়োজন উপভোগ করতে এসেছিলেন বিভিন্ন বয়সের দর্শক, যারা মুগ্ধতায় ভরে ওঠেন শরতের রঙিন আবেশে।
এ উৎসব শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং সমাজের প্রতি এক গভীর বার্তাও বহন করে। বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সঙ্গে শরৎকে কেন্দ্র করে উচ্চারিত হয় সম্প্রীতির আহ্বান। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রত্যয় ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশনায়। উদীচীর শিল্পীরা জানান, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে সমতা ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলার চেতনা এই আয়োজনকে আরও তাৎপর্যময় করেছে।
উদীচী যশোর শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি আমিনুর রহমান হিরু বলেন, “আমরা যারা গ্রামে বেড়ে উঠেছি, তারা শাপলার বিলে সাঁতার কেটেছি, কাশবনে ঘুরেছি। সেই অভিজ্ঞতায় শরৎ আমাদের কাছে অন্যরকম অনুভব জাগায়। কিন্তু শহরের শিশুদের কাছে এ সৌন্দর্য অপরিচিত।”
তিনি আরও জানান, অভিভাবকদের দায়িত্ব রয়েছে সন্তানদের প্রকৃতির এই অনন্য রূপের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার। আজও গ্রামীণ জীবনে কাশবন, শাপলার বিল কিংবা শরতের সাদা মেঘ ভেসে বেড়ানো প্রকৃতিকে দেখা যায়। এই বৈচিত্র্যই শিশুদের কাছে প্রকৃতি ও সংস্কৃতিকে একাকার করে তোলে।
বাংলার শরৎ প্রকৃতির মতোই পবিত্রতা, শুভ্রতা আর সৌন্দর্যের প্রতীক। এই উৎসবের মাধ্যমে শিল্পীরা জানালেন, শরৎ শুধু ঋতু নয়, বরং এটি আমাদের মনন ও জীবনকে নতুন করে গড়ে তোলে। শুভ্র কাশফুলের মতোই এটি মানুষের মনে শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌন্দর্যের আলো ছড়িয়ে দেয়।
যশোরের এই শরৎ বন্দনা হয়ে উঠেছে এক বর্ণিল উৎসব যেখানে সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও সমাজচেতনা মিলেমিশে একাকার হয়েছে। গান, নাচ, কবিতা ও সঙ্গীতের মাধ্যমে কেবল শরৎকে বন্দনা করা হয়নি, বরং মানুষের জীবনে শান্তি ও মঙ্গলের প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে।
শরৎ ঋতুর সৌন্দর্য যেমন শুদ্ধতা ও শুভ্রতার প্রতীক, তেমনি এই আয়োজনও এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে যশোরের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে।