জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন চলাকালীন এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস (৩১) ভোট গণনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। তার মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে নেমে আসে শোকের আবহ, সহকর্মীরা ভেঙে পড়েন কান্নায়।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে সিনেট ভবনের তৃতীয় তলায় ভোট গণনার কক্ষে দায়িত্ব পালন করছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। সকাল পৌনে ৯টার দিকে তিনি হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ে যান। সঙ্গে থাকা সহকর্মীরা দ্রুত স্ট্রেচারে করে তাকে নিচে নামান এবং অ্যাম্বুলেন্সে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পাবনা জেলার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ছিলেন সাংবাদিক রুমি খন্দকারের একমাত্র সন্তান। রুমি খন্দকার পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। মেধাবী শিক্ষিকা জান্নাতুল চারুকলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং এবার জাকসু ও প্রীতিলতা হল সংসদ নির্বাচনে পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
চারুকলা বিভাগের সভাপতি শামীম রেজা জানান, “আমি প্রীতিলতা হলে রিটার্নিং অফিসার আর জান্নাতুল পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ভোট গ্রহণ শেষে তিনি আগের দিন বাসায় যান। শুক্রবার সকালে ভোট গণনার জন্য সিনেট ভবনে এসে হঠাৎ দরজার সামনে পড়ে যান। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।”
তার সহকর্মীরা আরও জানান, তিনি দায়িত্ব পালন করতে এসে সকাল থেকেই মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই মৃত্যুর ঘটনায় সবাই হতবাক হয়ে পড়েন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “রাতে ক্লান্তির কারণে সব ভোট গণনা শেষ করা যায়নি। শুক্রবার সকালে জান্নাতুলসহ অন্যরা গণনার কাজে যোগ দেন। কিন্তু সিনেট হলের দরজার সামনে এসেই তিনি পড়ে যান। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।”
নির্বাচন কমিশনার রেজোয়ানা করিম (স্নিগ্ধা) ঘটনাস্থলে পোলিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “এই কঠিন সময়ে আমরা সবাই জান্নাতুলের জন্য দোয়া করি। তবে নির্বাচনী কাজ অসম্পূর্ণ রাখা সম্ভব নয়। তাই তার দায়িত্বে থাকা প্রীতিলতা হলের ভোট দ্রুত শেষ করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
জান্নাতুলের মৃত্যুর খবরে ভোট গণনার কক্ষজুড়ে নেমে আসে শোক। দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতেও নির্বাচন প্রক্রিয়া চালিয়ে নেওয়া হয়, তবে পরিবেশ ছিল গভীর বেদনাময়।