জুলাইকে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করার সত্যতা ও উমামা ফাতেমার বর্ণনা

উমামা ফাতেমা বলেন, জুলাই আন্দোলন ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত হয়েছে, যা তার জীবনের একটি ট্র্যাজিক অভিজ্ঞতা ছিল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে নিজের অভিজ্ঞতা ও মতামত ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানান, জুলাই আন্দোলনকে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছে, যা মূলত একটি নেতিবাচক পরিণতি হিসেবে দেখা উচিত। এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকা তার জীবনের একটি ট্র্যাজিক’ ঘটনা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন। এই প্রবন্ধে আমরা উমামা ফাতেমার বক্তব্যের বিস্তারিত আলোচনা, তার অভিজ্ঞতার আলোকে উঠে আসা বাস্তবতা এবং জুলাই আন্দোলন ও এর পরবর্তী প্রেক্ষাপট নিয়ে বিশ্লেষণ করব।

জুলাই আন্দোলনের উদ্ভব উমামার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

জুলাই আন্দোলন শুরুতে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হিসেবে, যেখানে দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক অসাম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম সংগ্রাম শুরু করেছিল। উমামা ফাতেমা, যিনি তখন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন, আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। পরে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র নির্বাচিত হন।

তবে উমামা ফাতেমা তার ফেসবুক লাইভে প্রকাশ করেছেন যে, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু হয়েছে, তা তার জন্য এক অবিশ্বাস্য এবং হতাশাজনক অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি বলেন, “আমার মাথায় আসেনি যে, জুলাইকে টাকা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হবে।”

মানি মেকিং মেশিন: কেন কীভাবে?

উমামা ফাতেমা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, আন্দোলন শুরু থেকে একটি প্ল্যাটফর্ম হলেও, সেটি দ্রুত একটি ব্যবসায়িক সুবিধা এবং টেন্ডার-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনিক নিয়োগ-প্রক্রিয়া, দখলদারিত্ব এবং বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেনের সঙ্গে এই প্ল্যাটফর্মের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে মানি মেকিং মেশিন বানানো হয়েছে। সামনাসামনি দেখা গেছে যে, ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি জায়গাজমি দখল ও চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত।” তিনি এটি একটি তীব্র নিন্দার মতো প্রকাশ করেন, কারণ এ ধরনের ব্যবহার আন্দোলনের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।

অভ্যুত্থান সমন্বয়ক পরিচয়ের নেতিবাচক প্রভাব

৫ আগস্টের পর থেকে উমামা ফাতেমা লক্ষ্য করেন, সমন্বয়ক পরিচয়ের অপব্যবহার ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। এ পরিচয়ে কেউ কেউ দখল-দখলানি এবং ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা শুরু করে। এমনকি তিনি মন্তব্য করেন, “এখন কি আমরা রক্ষীবাহিনীর মতো সমন্বয়ক বাহিনী তৈরি করতে যাচ্ছি?”

এই অবস্থা আন্দোলনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায়, উমামা মনে করেন, প্ল্যাটফর্মটির ভবিষ্যৎ ও প্রয়োজনীয়তা পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে। তিনি বলেন, “আমার ধারণা ছিল প্ল্যাটফর্মটিকে আরও ব্রড এবং ডিসেন্ট্রালাইজ করতে হবে,” কিন্তু এটি হয়নি, যার ফলে আজও আমরা এর নেতিবাচক প্রভাব ভোগ করছি।

অভিজ্ঞতার তিক্ততা দলের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা

উমামা ফাতেমা তার দীর্ঘ লাইভে জানান যে, দলটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ছিল অস্পষ্ট অনিয়ন্ত্রিত, যেখানে উপদেষ্টাদের বাসভবনে বসে সবকিছু ঠিক করা হতো। তিনি বলেন, “আমি পুরো প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিলাম।”

তাছাড়া, দলীয় চাঁদাবাজি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগগুলো তার কাছে স্পষ্ট ও পোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা ছিল। শুধু চট্টগ্রামের উদাহরণই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে, যা আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি ধ্বংস করেছে।

জুলাই ঘোষণাপত্র দলীয় বিভাজন

৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সালের জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদানের কর্মসূচি ছিল তৎপরবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা হঠাৎ করেই ঘোষণা করা হয় কিন্তু কার্যকর করা হয়নি। উমামা ফাতেমা বলেন, তিনি দলীয় গঠন নিয়ে আগ্রহী ছিলেন না এবং জানুয়ারির শেষের দিকে নিজে সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি আর এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে থাকবেন না।

ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে দলীয় কিছু সদস্য তাঁকে নতুন করে প্ল্যাটফর্ম গড়ার প্রস্তাব দেন, যা পরে ভুল বোঝাবুঝি ও দখলদারিত্বের অভিযোগের জন্ম দেয়।

ব্যক্তিগত মূল্যায়ন ভবিষ্যত পরিকল্পনা

উমামা ফাতেমা মনে করেন, গত এক বছরে তার অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। তিনি বলছেন, “আমি যদি একা কাজ করতাম, হয়তো আরও ভালো কিছু করতে পারতাম।” তার মতে, আন্দোলনের অনেকেই নিজের স্বার্থে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছে, যেখানে অনেকেই টিস্যু পেপার’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা তিনি কখনো মেনে নিতে পারেন না।

তবে ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিজেকে একটি প্রতিভাবান মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যার পক্ষে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ এসেছে এবং পরিবারের সমর্থন পেয়েছেন।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »