বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী প্রযুক্তি ব্র্যান্ড অ্যাপল আজ কোটি মানুষের আস্থার প্রতীক। কিন্তু এই নামটি সবসময়ের জন্য ঠিক ছিল না। প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জোবস এবং স্টিভ ওজনিয়াক প্রথমে তাঁদের কোম্পানির জন্য ভিন্ন দুটি নাম বেছে নিয়েছিলেন— এক্সিকিউটেক এবং মেট্রিক্স ইলেকট্রনিক্স।
যদিও নাম দুটি প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী শোনালেও, সেগুলোর মধ্যে ছিল কর্পোরেট জটিলতা এবং কঠিন উচ্চারণ। জোবস চেয়েছিলেন একটি সহজ, প্রাকৃতিক এবং মানুষের মনে গেঁথে যাওয়ার মতো নাম।
নতুন নাম নিয়ে যখন ওজনিয়াক চিন্তায় ডুবে ছিলেন, তখন স্টিভ জোবস কিছু সময়ের জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার একটি অর্গানিক ফার্মে চলে যান। সেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে তাঁর মাথায় আসে এক অভিনব চিন্তা— কোম্পানির নাম হোক এমন কিছু যা সহজ, প্রাকৃতিক এবং বন্ধুসুলভ।
জোবস বিশ্বাস করতেন, একটি ব্র্যান্ডের নাম যদি মানুষের মনে উষ্ণতা জাগায় এবং সহজে উচ্চারণযোগ্য হয়, তবে সেটি দীর্ঘমেয়াদে জনপ্রিয় হবে। ঠিক এই কারণেই তিনি ফলের নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘অ্যাপল’ প্রস্তাব করেন।
অ্যাপল নামটি বেছে নেওয়ার পেছনে ছিল আরেকটি কৌশলী চিন্তা। ৭০-এর দশকে ফোন ডিরেক্টরিতে নামগুলো বর্ণানুক্রমে সাজানো হতো। তাই ‘A’ দিয়ে শুরু হওয়া নাম হলে সেটি তালিকার সবার উপরে থাকত। এই সুবিধা কাজে লাগাতেই জোবস ‘Apple’ নামকে চূড়ান্ত করেন।
১৯৭৬ সালে জন্ম নেয় Apple Computer Company। প্রথমদিকে সংস্থাটি শুধুমাত্র কম্পিউটার উৎপাদনে মনোযোগী ছিল। পরে, সময়ের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তি জগতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করে এবং ২০০৭ সালে নাম পরিবর্তন করে হয় Apple Inc.— যা এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি জায়ান্ট।
আজকের অ্যাপল শুধু আইফোন নয়, বরং ম্যাকবুক, আইপ্যাড, অ্যাপল ওয়াচ, এবং আরও অসংখ্য আধুনিক গ্যাজেটের জন্য পরিচিত। ক্যালিফোর্নিয়ার এই প্রতিষ্ঠান শুধু প্রযুক্তি নয়, বরং নকশা, উদ্ভাবন এবং ব্র্যান্ড মূল্যের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত।
অ্যাপলের নামের গল্প প্রমাণ করে, একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে নামের প্রভাবও কম নয়। সহজ, স্মরণীয় এবং অর্থবহ একটি নাম— যা কেবল ব্র্যান্ড পরিচয় নয়, বরং মানুষের মনে আবেগ জাগায়— সেটিই দীর্ঘদিন টিকে থাকে। স্টিভ জোবসের শেষ মুহূর্তের সেই সিদ্ধান্ত আজ কোটি মানুষের হাতে থাকা প্রযুক্তি বিপ্লবের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।