অ্যাপল সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, ২০২৫ সালের তৃতীয় অর্থবছরের প্রান্তিকে তারা ৩০০ কোটিতম আইফোন বিক্রি সম্পন্ন করেছে। এটি শুধু একটি সংখ্যাই নয়, বরং ভোক্তা প্রযুক্তি ইতিহাসের অন্যতম বড় মাইলফলক। ২০০৭ সালে আইফোনের আত্মপ্রকাশের পর থেকে এই যাত্রা ছিল অভাবনীয়, আর এখন “Apple Intelligence” হচ্ছে সেই প্রযুক্তি যা এই যাত্রাকে ৪০০ কোটির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে প্রস্তুত।
আইফোন: একটি বিপ্লবের নাম
২০০৭ সালে স্টিভ জবস যখন প্রথম আইফোন উন্মোচন করেন, তখন বিশ্বের মোবাইল বাজার ছিল একদম ভিন্ন রূপে। টাচস্ক্রিন, ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং অ্যাপ ইকোসিস্টেম — এসব ধারণা ছিল অনেকটাই নবজাতক।
তবে প্রথম ১০০ কোটির মাইলফলক ছুঁতে অ্যাপলের সময় লেগেছিল প্রায় ৯ বছর। ২০১৬ সালে জুলাই মাসে প্রথমবারের মতো তারা ১০০ কোটিতম আইফোন বিক্রির ঘোষণা দেয়।
দ্রুততর গতি: ১০০ কোটির থেকে ৩০০ কোটির দিকে
- ১০০ কোটিতে পৌঁছাতে লেগেছিল ৯ বছর।
- ২০০ কোটিতে পৌঁছাতে লেগেছিল ৫ বছর।
- ৩০০ কোটিতে পৌঁছাতে লেগেছে মাত্র ৪ বছর।
এই গতি বৃদ্ধি প্রমাণ করে যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইফোন শুধু একটি স্মার্টফোনই নয়, বরং একটি গ্লোবাল ফেনোমেনন হয়ে উঠেছে।
বৈশ্বিক বিস্তার: চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া
চীন এবং ভারতের মতো উদীয়মান বাজারে আইফোনের প্রবেশ ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে বিক্রির গতিতে। বিশেষত, iPhone 6 যখন “phablet” আকারে বাজারে আসে, তখন বিশাল স্ক্রীনের জন্য ব্যবহারকারীদের আগ্রহ তুঙ্গে পৌঁছায়।
এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়া, যা দীর্ঘদিন ধরে স্যামসাংয়ের একচেটিয়া বাজার ছিল, সেখানেও অ্যাপলের অবস্থান দৃঢ় হতে শুরু করে। এটি অ্যাপলের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার নিদর্শন।
প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা: অ্যাপলের ব্র্যান্ড ভ্যালু
বিশ্ব যখন ডেটা প্রাইভেসি সংকটে ভুগছিল, তখন অ্যাপলের ব্যবহারকারী-কেন্দ্রিক নিরাপত্তা নীতি তাদের একধাপ এগিয়ে দেয়। ফেস আইডি, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন, এবং নিরাপদ বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অ্যাপল গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করে।
ক্যামেরা ও কাস্টমাইজেশন: আধুনিক আইফোনের মূল আকর্ষণ
তৃতীয় ১০০ কোটি বিক্রির সময়কালে অ্যাপল আইফোনে যুক্ত করেছে:
- প্রফেশনাল-গ্রেড ক্যামেরা
- iOS কাস্টমাইজেশন
- সোশ্যাল ইন্টিগ্রেশন
- বড় স্ক্রিন ভ্যারিয়েন্ট
- বাজেট থেকে প্রিমিয়াম পর্যন্ত দাম বৈচিত্র্য
এগুলো সবই গ্রাহকদের বিভিন্ন স্তরে আকৃষ্ট করেছে।
অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স: চতুর্থ ১০০ কোটির চালিকা শক্তি
২০২৬ সালে Apple Intelligence দ্বারা চালিত নতুন সিরি আসতে চলেছে, যা অ্যাপলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে।
Apple Intelligence-এর ফিচারসমূহ:
- ব্যক্তিগতকৃত সিরি অভিজ্ঞতা
- AI API ডেভেলপারদের জন্য
- প্রাইভেট ক্লাউড কম্পিউট এর মাধ্যমে ChatGPT ও Claude-এর ইন্টিগ্রেশন
- গ্রিন এনার্জিতে চালিত নিরাপদ সার্ভার ব্যবহার
এসব ফিচার ব্যবহারকারীদেরকে আরো কার্যকর এবং নিরাপদ AI ব্যবহারের সুযোগ দেবে।

অ্যাপল ইকোসিস্টেম ও কনফিডেন্স
অ্যাপলের অন্যতম শক্তি তাদের ইন্টিগ্রেটেড ইকোসিস্টেম — iPhone, iPad, Mac, Apple Watch সব মিলিয়ে একটি নিরবিচ্ছিন্ন ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
আর Apple Intelligence এই ইকোসিস্টেমের সঙ্গে মিশে গিয়ে iPhone কে পরিণত করছে একটি পূর্ণাঙ্গ AI টুলবক্সে — যা শুধুমাত্র AI নয়, বরং AI-এর নিরাপদ ব্যবহারের পথিকৃত।
ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর: ২০২৮ সালের লক্ষ্যমাত্রা ৪০০ কোটি
বর্তমান হারে চললে, ২০২৮ সালের মধ্যেই অ্যাপল ৪০০ কোটিতম আইফোন বিক্রি করে ফেলবে বলে অনুমান করা যাচ্ছে। এটি কেবল বিক্রির মাইলফলক নয়, বরং প্রমাণ করে যে, আইফোন এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস।
আইফোন বিক্রির টাইমলাইন (সংক্ষেপে)
সময়কাল | বিক্রির মাইলফলক | সময় লেগেছে |
২০০৭ – ২০১৬ | ১০০ কোটির মাইলফলক | প্রায় ৯ বছর |
২০১৬ – ২০২১ | ২০০ কোটির মাইলফলক | প্রায় ৫ বছর |
২০২১ – ২০২৫ | ৩০০ কোটির মাইলফলক | মাত্র ৪ বছর |
২০২৫ – ? | লক্ষ্যমাত্রা ৪০০ কোটি | সম্ভবত <৩ বছর |
স্মার্টফোন নয়, স্মার্ট প্ল্যাটফর্ম
আজকের আইফোন শুধুমাত্র একটি কমিউনিকেশন ডিভাইস নয়, বরং একটি চলন্ত কম্পিউটার, AI সেন্টার, এবং পার্সোনাল লাইফ ম্যানেজার। Apple Intelligence এর দ্বারা সংযুক্ত AI ফিচারগুলো iPhone কে ভবিষ্যতের জন্য আরও শক্তিশালী এবং প্রাসঙ্গিক করে তুলছে।
আমরা বিশ্বাস করি, অ্যাপলের AI-চালিত ভবিষ্যৎ কৌশল এবং ব্যবহারকারী-কেন্দ্রিক ডিজাইন iPhone কে ৪০০ কোটি ইউনিট ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে খুব দ্রুতই।