মঙ্গলগ্রহ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। লাল গ্রহের রহস্য উদ্ঘাটনে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নাসার রোভার পারসিভিয়ারেন্স সম্প্রতি এমন এক ছবি পাঠিয়েছে যা দেখে বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। ছবিতে দেখা গেছে কচ্ছপ সদৃশ এক প্রস্তরখণ্ড। এ যেন অন্য গ্রহে পৃথিবীর পরিচিত প্রাণীর ছায়া!
মঙ্গলে কচ্ছপ সদৃশ পাথরের ছবি
২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট পারসিভিয়ারেন্স তার শার্লক ওয়াটসন ক্যামেরা দিয়ে একটি বিশেষ ছবি ধারণ করে। ছবিতে স্পষ্ট দেখা যায়—একটি পাথরের মধ্যে কচ্ছপের মতো মাথা ও সামনের দুই পা বেরিয়ে আছে। কচ্ছপের খোলসের মতো গঠনও নজরে আসে। প্রথম দেখায় মনে হয়, যেন সত্যিই মঙ্গলে কোনো কচ্ছপ মাথা তুলেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটি আসলে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া একটি পাথুরে অবয়ব। দীর্ঘ সময় ধরে বাতাস, ধুলোঝড় এবং ক্ষয়ের ফলে এমন আকৃতি তৈরি হয়েছে।
পারসিভিয়ারেন্স কোথায় এই ছবি তুলেছে?
বর্তমানে পারসিভিয়ারেন্স জেজেরো ক্রেটার অঞ্চলে গবেষণা চালাচ্ছে। অতীতে এখানে বিশাল হ্রদ ছিল বলে ধারণা করা হয়। এই এলাকা ঘুরে ঘুরে রোভার বিভিন্ন শিলা ও প্রস্তরের ছবি পাঠাচ্ছে। এর মধ্যেই ধরা দিয়েছে কচ্ছপ সদৃশ ওই প্রস্তরখণ্ড।
বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া
নাসার বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কার দেখে বিস্মিত হলেও তারা বিষয়টিকে “প্যারাইডোলিয়া” বলে ব্যাখ্যা করছেন। মানুষের মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবেই পরিচিত কোনো চেহারা বা আকারকে অচেনা বস্তুতে খুঁজে বের করে। এ কারণেই মঙ্গলের পাথরে কচ্ছপ, মাকড়সার জাল কিংবা মানুষের মুখের মতো গঠন আমাদের চোখে পড়ে।
এর আগেও মিলেছে আশ্চর্যসদৃশ আকৃতি
এটাই প্রথম নয়। এর আগে মঙ্গলের পাথরে মাকড়সার জালের মতো গঠন, মানুষের আঙুলের ছাপ, এমনকি ব্লুবেরি সদৃশ ক্ষুদ্র গোলক পাওয়া গেছে। সবই প্রাকৃতিকভাবে গঠিত। তবে এসব ছবি মানুষের কৌতূহলকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, এসব প্রস্তর হয়তো প্রাচীন কোনো প্রাণীজীবনের ইঙ্গিত বহন করে।
মঙ্গলের রহস্য উন্মোচনে পারসিভিয়ারেন্সের ভূমিকা
পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গল গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলেছে। এর প্রধান লক্ষ্য হলো—
- মঙ্গলের মাটি ও পাথরের নমুনা সংগ্রহ করা
- প্রাচীন জীবনের কোনো চিহ্ন অনুসন্ধান করা
- ভবিষ্যতে মানুষের বসবাসের উপযোগিতা খুঁজে দেখা
এই কচ্ছপ সদৃশ প্রস্তরের ছবি শুধু মানুষের কৌতূহলই বাড়ায়নি, বরং প্রমাণ করেছে যে মঙ্গল গ্রহে ভূতাত্ত্বিক গঠন কতটা বৈচিত্র্যময় হতে পারে।