আমেরিকার জর্জিয়া স্টেটের ম্যাকডোনো শহর। ২০২৩ সালের ২৬ জুন দুপুর। হঠাৎ করেই আকাশে দেখা গেল জ্বলন্ত আগুনের গোলা। মুহূর্তের মধ্যে সেই আগুন ছুটে এলো শহরের একটি বাড়ির দিকে। প্রবল গতিতে ছাদ ভেদ করে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ল একটি অদ্ভুত পিণ্ড। পরে নাসা নিশ্চিত করল—এটি কোনো সাধারণ পাথর নয়, বরং মহাশূন্য থেকে আসা একটি উল্কাপিণ্ড, যার বয়স পৃথিবীর থেকেও বেশি।
বাড়ির বাসিন্দা তখন বসার ঘরে দুপুরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আচমকা গুলির মতো শব্দ কানে আসতেই চমকে ওঠেন। পরে দেখেন, ছাদের একটি অংশ ভেঙে গেছে এবং মেঝেতে পড়ে আছে কালোজামের মতো দেখতে একটি কালো পাথর। অল্পের জন্য তিনি বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষা পান। গবেষকরা পরে জানান, এই পাথরের ওজন প্রায় ২৩ গ্রাম হলেও এর আঘাত এত প্রবল ছিল যে মেঝের অংশ ভেঙে যায়।
জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, এই উল্কাপিণ্ডের বয়স প্রায় ৪৫৬ কোটি বছর—পৃথিবীর থেকেও প্রায় দুই কোটি বছর বেশি। বিজ্ঞানী স্কট হ্যারিস জানান, এর উৎস মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝের গ্রহাণুপুঞ্জ। প্রায় ৪৭ কোটি বছর আগে সেখানকার একটি গ্রহাণু ভেঙে এর সৃষ্টি হয়েছিল। মহাকাশে ঘুরতে ঘুরতে এটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে ধরা পড়ে এবং ঘর্ষণে আগুন জ্বলে ওঠে, যা সেই দিন জর্জিয়ার বাসিন্দারা আকাশে দেখেছিলেন।
পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার উল্কা পাওয়া গেলেও সরাসরি মানুষের গায়ে আঘাত করার ঘটনা হাতে গোনা। এর মধ্যে অন্যতম ১৯৫৪ সালের আলাবামার সিলাকোগা ঘটনা। সেদিন প্রায় ৪ কেজি ওজনের একটি উল্কা ছাদ ভেদ করে রেডিওতে পড়ার পর ছিটকে গিয়ে আঘাত করেছিল গৃহিণী ইএইচ হজেসকে। তিনি সামান্য আহত হলেও বেঁচে যান।
২৬ জুনের ঘটনাতেও অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন ম্যাকডোনোর বাসিন্দা। গবেষকদের প্রস্তাব—শহরের নাম অনুসারে এই উল্কার নাম দেওয়া হোক “ম্যাকডোনো উল্কা”।
উল্কা যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন এর গতি প্রতি ঘণ্টায় কয়েক হাজার মাইল হতে পারে। মাধ্যাকর্ষণ ও বায়ুর ঘর্ষণে এর পৃষ্ঠে আগুন ধরে যায়। মাটিতে পড়ার সময় এর আয়তন মূল আকারের পাঁচ শতাংশেরও কম হয়। তাই অনেক সময় এটি নুড়ি বা ছোট পাথরের মতো হলেও, এর আঘাত বন্দুকের গুলির মতো শক্তিশালী হতে পারে।
গবেষণা বলছে, জর্জিয়া স্টেটে এখন পর্যন্ত মোট ২৭টি উল্কাপিণ্ড পাওয়া গেছে। তবে এত ছোট সময়ে খুঁজে পাওয়া উল্কার সংখ্যা আগে কখনও এত বেশি ছিল না। প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং মানুষের সচেতনতার কারণে ভবিষ্যতে আরও বেশি উল্কাপিণ্ড চিহ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এসব উল্কায় কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠনের উপাদানের মতোই অনেক পদার্থ পাওয়া যায়, যা সৌরজগতের ইতিহাস বোঝার ক্ষেত্রে অমূল্য তথ্য দেয়।