গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের ভয়াবহ ক্ষয়: চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়

গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ক্ষয় সংকটের ফলে চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাল ক্ষতি হয়েছে, উষ্ণায়নের প্রভাবে ফ্যাকাশে হয়েছে বিশাল অংশ।

অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলে বিস্তৃত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত, বর্তমানে মারাত্মক পরিবেশগত সংকটের মুখে। অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সের সর্বশেষ বার্ষিক সমীক্ষা বলছে, গত এক বছরে এই প্রবাল প্রাচীর বিপুল পরিমাণ জীবন্ত প্রবাল হারিয়েছে—যা গত ৪০ বছরে দেখা যায়নি।

২০১৭ সাল থেকে রিফে প্রবালের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কিন্তু গত এক বছরের মধ্যে হঠাৎ করেই এই বৃদ্ধি থেমে গেছে। এর মূল কারণ ব্লিচিং’—যার ফলে প্রবাল ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের মতে, ব্লিচিং মানে প্রবাল সম্পূর্ণ মৃত নয়, তবে তা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে, রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে এগোয়।

অতিরিক্ত সমুদ্র তাপমাত্রা প্রবাল ব্লিচিংয়ের প্রধান কারণ। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, যা ৩,৪৪,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত এবং প্রায় ১,৫০০ কিলোমিটার লম্বা, জলবায়ু পরিবর্তনের চাপে ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে প্রবাল ফ্যাকাশে হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ২০২৪ সালের এপ্রিলেই কর্তৃপক্ষ জরুরি সতর্কতা জারি করে।

বার্ষিক সমীক্ষায় দেখা গেছে—দক্ষিণ ভাগে: প্রবালের এক-তৃতীয়াংশ ফ্যাকাশে,মধ্য ভাগে: মোট এলাকার প্রায় ১৪% ব্লিচিংয়ের শিকার,উত্তর ভাগে: প্রবালের চার ভাগের এক ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত।এটি প্রমাণ করে যে, তীব্র গরম ও চরম আবহাওয়ার প্রভাব সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে কতটা ভয়াবহ আঘাত হানছে।

অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সের প্রধান গবেষক মাইক এমস্লাই জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের সমীক্ষায় রিফে উল্লেখযোগ্য প্রবাল বৃদ্ধির প্রমাণ মিললেও, বছরের মাঝামাঝি থেকেই দ্রুত ফ্যাকাশে হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তার মতে, এটি শুধু একটি প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বরং বিশ্ব উষ্ণায়নের সরাসরি ফলাফল

গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ শুধু অস্ট্রেলিয়ার গর্ব নয়—এটি বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ জলজ জীববৈচিত্র্যের কেন্দ্র। প্রবালের ক্ষয় মানে কেবল রঙ হারানো নয়, বরং অসংখ্য প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক কচ্ছপ ও অন্যান্য জীবের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়া। এর ফলে সমুদ্রের খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়তে পারে এবং মাছ ধরার শিল্প বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

পরিবেশবিদরা সতর্ক করে বলছেন, যদি দ্রুত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো, সমুদ্র দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবাল সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ হয়তো কেবল ইতিহাসের পাতায় টিকে থাকবে। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের বর্তমান অবস্থা আমাদের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা। এটি দেখিয়ে দিচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন কোনো দূরের সমস্যা নয়—এটি এখনই ঘটছে এবং আমাদের জীবন ও প্রকৃতির উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। এই রিফকে বাঁচানো মানে শুধু একটি সুন্দর প্রাকৃতিক বিস্ময় রক্ষা করা নয়, বরং সমুদ্রের সুস্থ বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ করা, যা শেষ পর্যন্ত মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গেও জড়িত।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »