অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক একাউন্টে তিনি লেখেন, “১/১১ এর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে”।পরে পোস্টটি সম্পাদনা করে তিনি আরও একটি লাইন যোগ করেন:
“তবে, জুলাই জয়ী হবে। জনগণের লড়াই পরাজিত হবে না।”
কী ইঙ্গিত দিচ্ছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম?
উপদেষ্টার এই বক্তব্য সরাসরি বা স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না হলেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি গভীর বার্তা বহন করছে। ‘এক এগারো’ বলতে সাধারণত বোঝানো হয় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি, যখন দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে।
মাহফুজ আলমের এমন মন্তব্য অনেকের কাছে সেই সময়ের পুনরাবৃত্তির ইঙ্গিত বলেই মনে হয়েছে।
অতীতের স্মরণ: ১/১১ কী ঘটেছিল?
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ জরুরি অবস্থা জারি করেন। পরবর্তীতে সেনাসমর্থিত সরকার গঠন করা হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। এই সময়কে ঘিরে ব্যাপক ধরপাকড়, রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার এবং দীর্ঘ প্রায় দুই বছর নির্বাচনের স্থগিত থাকার ঘটনা ঘটে।
“জুলাই জয়ী হবে” — এর মানে কী?
মাহফুজ আলম পোস্টে স্পষ্ট করে লিখেছেন,
“জুলাই জয়ী হবে। জনগণের লড়াই পরাজিত হবে না।”
এটি বর্তমান রাজনৈতিক আন্দোলন, বিশেষ করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনতার প্রতিরোধ ও আন্দোলনের জয়ের প্রত্যাশা প্রকাশ করে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
পুরনো পোস্ট রেফারেন্স: অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান
এই পোস্ট দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ২০২৩ সালের ২ আগস্ট তারিখের একটি পুরনো ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেন, যেখানে তিনি লিখেছিলেন:
“যখন সবাই এক দফা দিয়ে হাসিনাকে পতনের কথা বলছিল, ২ তারিখ রাতে সমন্বয়কদের চাপের মুখে এক দফা দিতে বলা হচ্ছিল, তখন আমরা অসহযোগের কথা বলছিলাম। অনেকের সমালোচনার মুখেও অসহযোগ আন্দোলনকে কর্মসূচি বানানো হইসিল।”
এছাড়া তিনি আরও উল্লেখ করেন:
“অসহযোগ হয়ে সকল পক্ষ থেকে জুলাইয়ের শক্তি আর ফ্যাসিবাদী শক্তি আলাদা হয়ে গেলে আজকের অনেক সঙ্কট দেখতে হতো না।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: নতুন করে উত্তেজনা
উপদেষ্টার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, দেশে আবারও কোনো বড় ধরনের প্রশাসনিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি হয়তো কৌশলগত এক ধরণের চাপ তৈরির চেষ্টা।