শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা: রাজনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থায় এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা প্রভাব রাজনীতি বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। বিশ্ববিদ্যালয় সংঘর্ষ ও আন্দোলন জাতীয় রাজনীতিতে কীভাবে সংকট তৈরি করছে জানুন বিস্তারিত।

বাংলাদেশের রাজনীতি ও শিক্ষাঙ্গন সবসময়ই একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হঠাৎ করে যে অস্থিরতা ও সংঘর্ষ দেখা দিয়েছে, তা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে—হঠাৎ কেন শিক্ষাঙ্গনগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠলো এবং এর প্রভাব কতটা গভীর হতে পারে জাতীয় রাজনীতিতে?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়—এই তিনটি ক্যাম্পাসে টানা কয়েকদিন ধরে অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষের পর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় এখনো ১৪৪ ধারা জারি আছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতিও নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আসন্ন চাকসু নির্বাচনকে ঘিরে এই উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসু নির্বাচনে নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে ছাত্রদলের আন্দোলন শুরু হয়েছে। এ দাবিকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে, ফলে ক্যাম্পাস এখনো অস্থির।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দফা দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে হলে অবস্থান অব্যাহত রেখেছে। তারা নতুন করে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগেও আন্দোলন ও অস্থিরতার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম দীর্ঘদিন ব্যাহত হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে উপাচার্য অপসারণ কিংবা আবাসন-সংকট—বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছরে প্রায় সব ক্যাম্পাসেই পড়াশোনায় ভাটা পড়েছে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাহাবুল হক মনে করেন, সাম্প্রতিক অস্থিরতা একাডেমিক কার্যক্রমে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। পরীক্ষা বন্ধ থাকায় দীর্ঘ সেশনজট তৈরি হবে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতকে অনিশ্চিত করে তুলবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান বলেছেন, আগে ক্যাম্পাস আন্দোলনের প্রভাব রাজনীতিতে পড়তো, কিন্তু এখন তা কয়েকগুণ বেশি। ছোট ছোট বিক্ষোভও জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব শুধু সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ক্যাম্পাস অস্থিরতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। ছাত্র আন্দোলন বরাবরই জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য অপসারণের ঘটনা তার সাম্প্রতিক উদাহরণ।

এখন যেহেতু জাতীয় নির্বাচন সামনে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই ক্যাম্পাস অশান্তিকে আলাদা কোনো ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। বরং এটি চলমান রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।

রাজনৈতিক দলগুলোও এই আন্দোলনগুলোকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারে। ছাত্র রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় রাজনীতির প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অশান্তি নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমীকরণকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়মিত পড়াশোনা বজায় রাখা। একের পর এক আন্দোলন, সংঘর্ষ ও প্রশাসনিক অচলাবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে চাকরির বাজার ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির প্রক্রিয়ায়ও।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে তা কেবল শিক্ষার ক্ষতি করবে না, বরং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »