ডুরান্ড কাপে ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচগুলোতে এবার গ্যালারির ব্যানারগুলো যেন হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তার বাহক। কিছুদিন আগে ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ এবং বাংলা ভাষার প্রতি অসম্মানের প্রতিবাদে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে ঝুলেছিল তীব্র প্রতিবাদী ব্যানার। আর এবার কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে ভারতীয় বায়ুসেনার বিরুদ্ধে খেলায় সেই একই গ্যালারিতে দেখা গেল ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে কুর্নিশ জানানো একটি ব্যানার।
পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানকে জবাব দিতে ভারতের বায়ুসেনা পরিচালনা করেছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। এতে পাকিস্তানের ৬টি বিমানঘাঁটি ও ৯টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করা হয়। রবিবার ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচে গ্যালারিতে সেই অভিযানের প্রশংসাসূচক ব্যানার ঝুলে যায়। কালো পটভূমিতে সাদা অক্ষরে ইংরেজি বার্তা — “৬টি পাক বিমানঘাঁটি এবং ৯টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য তারা চিরকাল ভারতীয় বায়ুসেনার ভয়ে থাকবে।”
বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার প্রতিবাদী ব্যানারের পর হঠাৎ জাতীয়তাবাদী স্লোগান সমর্থকদের একাংশকে অবাক করেছে। বিশেষত যারা প্রথম ব্যানারের সময় রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন, তারা এবার চুপ থাকতেই পছন্দ করেছেন। অনেকে মনে করছেন, এটি ছিল সচেতনভাবে ‘ভারসাম্য রক্ষার’ কৌশল। যদিও ‘ইস্টবেঙ্গল আল্ট্রাজ়’-এর অন্যতম সংগঠক কৃষ্ণেন্দু দত্ত জানিয়েছেন — এই ব্যানারের পরিকল্পনা আগেই করা হয়েছিল, এর সঙ্গে রাজনৈতিক ভারসাম্যের কোনও সম্পর্ক নেই।
ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণের প্রসঙ্গ ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। তৃণমূল ও বামফ্রন্ট ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারির প্রতিবাদী ব্যানারকে অনেক রাজনৈতিক নেতাই প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তবে বিজেপি সমর্থক কিছু দর্শক সেই ঘটনায় অসন্তুষ্ট হয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। এবার বায়ুসেনাকে কুর্নিশ জানানো ব্যানার রাজনৈতিক সমালোচনাকে খানিকটা থামিয়ে দিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
৬-১ গোলে ভারতীয় বায়ুসেনাকে হারালেও শেষ বাঁশির পর গ্যালারি থেকে সেনার নামে জয়ধ্বনি ওঠে। খেলোয়াড়েরাও গ্যালারিকে পাল্টা স্যালুট জানান। ব্যানার ঝোলানোর সময়ও ছিল তাৎপর্যপূর্ণ — খেলা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে গ্যালারিতে উন্মোচিত হয় এটি। অনেকেই মনে করেন, ম্যাচের প্রতিপক্ষ বায়ুসেনা হওয়ায় ‘অপারেশন সিঁদুর’কে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদের আবেগ ফুটিয়ে তোলার জন্য এটি ছিল সঠিক সময়।
ইস্টবেঙ্গলের ব্যানারের পর মোহনবাগান গ্যালারিতেও দেখা গেছে একই ধরনের প্রতিবাদী ছবি। ডায়মন্ড হারবারের বিরুদ্ধে ম্যাচে সবুজ-মেরুন সমর্থকেরাও বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণের প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন। এতে বোঝা যায়, ফুটবল মাঠ শুধু খেলার নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তারও একটি বড় মঞ্চ হয়ে উঠছে।
গত কয়েক দিনের ঘটনায় স্পষ্ট — ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা কেবল বাঙালি অস্মিতা নয়, জাতীয়তাবাদী গর্বও প্রকাশ করতে জানেন। প্রথমে বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার বার্তা, এরপর ভারতীয় বায়ুসেনাকে কুর্নিশ — এই দুই দিক মিলিয়ে গ্যালারি যেন ফুটবলের পাশাপাশি বৃহত্তর সামাজিক ও জাতীয় চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।