উত্তরপ্রদেশের মিরাট জেলার দাউরালা ও আশপাশের গ্রামগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র আতঙ্ক। রহস্যময় একদল নগ্ন যুবক মহিলাদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের ভাষায়, এই দুষ্কৃতীচক্রকে এখন “নুড গ্যাং” নামে ডাকা হচ্ছে। চতুর্থবারের মতো ঘটেছে এমন ভয়াবহ ঘটনা, যার ফলে গ্রামবাসীদের মধ্যে তীব্র উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
পুলিশ ও প্রশাসন সর্বাত্মক তৎপরতা শুরু করেছে। ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি, মহিলা পুলিশ মোতায়েন ও গোটা এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবুও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
মিরাটের দাউরালা এলাকায় একের পর এক ঘটনার জেরে আতঙ্কে কাঁটা স্থানীয় মহিলারা। সর্বশেষ ঘটনায়, ভারালা গ্রামের এক মহিলা অভিযোগ করেছেন যে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে দু’জন যুবক তাঁকে জোর করে নির্জন কৃষিক্ষেত্রে টেনে নিয়ে যায়। তিনি চিৎকার করতে শুরু করলে কোনোভাবে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।
গ্রামবাসীরা তৎক্ষণাৎ ছুটে এসে পুরো কৃষিক্ষেত্র ঘিরে ফেললেও, অভিযুক্তরা রহস্যময়ভাবে উধাও হয়ে যায়। মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন যে, হামলাকারীদের শরীরে কোনও পোশাক ছিল না। নগ্ন অবস্থাতেই তারা তাঁর উপর আক্রমণ চালায়।
গ্রামবাসীদের দাবি, এটি ইতিমধ্যেই চতুর্থ ঘটনা, কিন্তু লজ্জা ও সামাজিক চাপের কারণে অনেক মহিলা অভিযোগ জানাননি। ভুক্তভোগী ওই মহিলা কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করেছেন এবং এখন ভিন্ন পথে কাজে যাতায়াত করছেন।
গ্রামের মহিলাদের বড় অংশ আতঙ্কে ঘর থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকেই সন্ধ্যার পর একা বাইরে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় গ্রামবাসীরা পুলিশের সহায়তা চেয়ে এগিয়ে এসেছেন।
গ্রামপ্রধান রাজেন্দ্র কুমার জানিয়েছেন,“প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম বিষয়টি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু বারবার এমন ঘটনা ঘটায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে, দুষ্কৃতীচক্র শুধুমাত্র মহিলাদেরই টার্গেট করছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ড্রোনের সাহায্যে গোটা দাউরালা এলাকায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি মহিলা পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
যদিও স্থানীয়দের একাংশের দাবি, “নুড গ্যাং” আসলে গুজব, এবং সোশ্যাল মিডিয়া ও মুখে মুখে ছড়ানো খবর আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে। তবে ভুক্তভোগীদের বিবরণ এবং পুলিশের সক্রিয় পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে ঘটনাগুলি বাস্তব হতে পারে।
এ বিষয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন,“তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। আমরা নিশ্চিত নই, এটি কোনও সংগঠিত চক্র কিনা, নাকি আলাদা আলাদা ঘটনা। প্রত্যেকটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
মিরাট পুলিশ ইতিমধ্যে ড্রোনের মাধ্যমে গ্রামগুলির আকাশ থেকে নজরদারি শুরু করেছে। সন্দেহজনক চলাফেরা নজরে আনতে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া, গ্রামীণ মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় বিশেষ নিরাপত্তা টহল মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহিলাদের সচেতন করার জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পের আয়োজন শুরু হয়েছে। সেখানে তাদের নিজেদের সুরক্ষার কৌশল, জরুরি হেল্পলাইন নম্বর ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের মিরাটে “নুড গ্যাং”-এর তাণ্ডব গ্রামীণ মহিলাদের নিরাপত্তার বড় সংকট তৈরি করেছে। যদিও কিছু বাসিন্দা একে গুজব বলছেন, তবুও ঘটনার পুনরাবৃত্তি পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করছে।
মিরাট পুলিশ জানিয়েছে, “যে কোনও সন্দেহজনক পরিস্থিতি হলে দ্রুত পুলিশকে খবর দিতে হবে। মহিলাদের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
দাউরালা এবং আশপাশের গ্রামগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদারকরণ, ড্রোন নজরদারি এবং মহিলা পুলিশের মোতায়েন প্রমাণ করছে যে প্রশাসন বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এখন সবার নজর পুলিশের তদন্তের দিকে।