হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার মন্তব্য: জামায়াতে ইসলামী ‘একটি চিতাবাঘ, যার দাগ বদলায় না’

জামায়াতে ইসলামী মন্তব্য শ্রিংলা জানালেন, এটি এক চিতাবাঘ যার দাগ বদলায় না। বাংলাদেশে জামায়াত নিয়ে কূটনীতিকের স্পষ্ট অবস্থান।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে। ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনীতিক হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সম্প্রতি এই প্রসঙ্গেই কঠোর মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী একটি চিতাবাঘ, যার দাগ বদলায় না।” তাঁর মতে, দলটি ইতিহাসে যেমন ছিল, আজও তার ধারা বহন করছে।

১১ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে আয়োজিত আমরা কি বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত?” শীর্ষক এক আলোচনায় হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা তাঁর মতামত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে, কারণ তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রয়েছে সহিংসতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার ইতিহাস।

শ্রিংলা আরও উল্লেখ করেন, জামায়াত মুসলিম ব্রাদারহুডের অংশ। এটি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সক্রিয় একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। তাঁর ভাষায়, এই চিতাবাঘ তার দাগ বদলায় না।”

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। শ্রিংলা স্পষ্ট করে বলেন, এ দলের অতীত রক্তাক্ত ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াত হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালানোর ক্ষেত্রেও দায়ী।

ভারতের সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ জানায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো জামায়াতের ছাত্র সংগঠন সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে জয় লাভ করেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলটির পুনরুত্থান ও প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

যদিও শ্রিংলা জামায়াতের সমালোচনা করেছেন, তিনি একইসঙ্গে কূটনৈতিক অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন। তাঁর মতে, ক্ষমতায় যেই আসুক, ভারত তাদের সঙ্গেই কাজ করবে। তবে যদি কোনো পক্ষ ভারতের স্বার্থবিরোধী ভূমিকা নেয়, তাহলে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

বাংলাদেশে ভারতের প্রাক্তন হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা থেকে শ্রিংলা বলেন, ভারত সবসময় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারতের নীতি হলো—প্রতিবেশীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।

শ্রিংলা আরও সতর্ক করে দেন পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান ভূমিকাকে নিয়ে। তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় সক্রিয়ভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। তাঁর মতে, এই বিষয়টি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের প্রভাব সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার কারণে এ দলকে এখনো বিতর্কিত হিসেবে দেখা হয়। শ্রিংলার মন্তব্য সেই বিতর্ককে নতুন করে উসকে দিয়েছে।

তবে ভারতের অবস্থান সুস্পষ্ট—বাংলাদেশের জনগণ যাকে ক্ষমতায় বসাবে, তাদের সঙ্গেই কাজ করবে। কিন্তু ভারতের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার।

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার মন্তব্য আবারও স্পষ্ট করলো যে, জামায়াতে ইসলামী নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই সতর্ক। তিনি দলটিকে একটি চিতাবাঘ” হিসেবে তুলনা করেছেন, যার প্রকৃতি অপরিবর্তিত। বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে, তখন তাঁর এই বক্তব্য দুই দেশের সম্পর্ক ও আঞ্চলিক কূটনীতির দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পারস্পরিক সহযোগিতা, নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠলেও, জামায়াতের মতো দলগুলোর পুনরুত্থান এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »