ফ্রান্সে আবারও রাজপথে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘনিষ্ঠ সহযোগী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুর নাম ঘোষণা করার পর থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে দেশজুড়ে পরিস্থিতি। রাজধানী প্যারিস থেকে শুরু করে মার্সেই ও অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে ‘ব্লক এভরিথিং’ আন্দোলন। প্রথমদিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের প্রতিবাদ হলেও খুব দ্রুতই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য পরিবর্তিত হয়ে সরকারের বাজেট কাটছাঁট ও ঋণনীতির বিরুদ্ধে রূপ নেয়।
প্রধানমন্ত্রী নিয়োগকে কেন্দ্র করে উত্তাল ফ্রান্স
শাসকজোটের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেরু আস্থাভোটে পরাজিত হয়ে পদত্যাগ করেন। পরদিনই প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ সংবিধান অনুযায়ী নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেবাস্তিয়ান লেকর্নুর নাম ঘোষণা করেন। তবে এই সিদ্ধান্তকে সহজভাবে নেয়নি সাধারণ নাগরিকরা। লাখো মানুষ রাজপথে নেমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিভিন্ন শহরে অবরোধ ও মিছিল শুরু হয়।
সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক গ্রেপ্তার
বিক্ষোভ দ্রুত সহিংস রূপ নেয়। রাজধানী প্যারিসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩০০-র বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ৫০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিক্ষোভের মূল কারণ: বাজেট কাটছাঁট ও ঋণনীতি
প্রথমে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিরোধিতা দিয়ে শুরু হলেও, অল্প সময়ের মধ্যেই আন্দোলনের মূল ইস্যু হয়ে ওঠে সরকারের কঠোর বাজেট নীতি ও ঋণসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত। মাক্রোঁ সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতি সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অতি ধনীদের কর ছাড় নিয়ে ক্ষোভ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধুমাত্র বাজেট বা ঋণনীতি নয়, মাক্রোঁ সরকারের অতি ধনীদের প্রতি সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্তও জনঅসন্তোষ বাড়িয়ে তুলেছে। বর্তমানে ফ্রান্সে অতি ধনীদের উপর মাত্র ২ শতাংশ কর প্রযোজ্য। দেশটিতে প্রায় ১,৮০০ জনের সম্পত্তির মূল্য ১০ কোটি ইউরোর (প্রায় ১,০৩৩ কোটি টাকা) বেশি। অধিকাংশ ফরাসি নাগরিক পুরনো করনীতির পক্ষপাতী হলেও, মাক্রোঁ সেই নীতি বাতিল করে ধনীদের কর ছাড় দেন। এতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও তীব্র হয়।
ফরাসি রাজনীতিতে ডানপন্থী উত্থানের সম্ভাবনা
এই আন্দোলন কেবল তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক সংকট নয়, বরং ফরাসি রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও বয়ে আনতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, চলমান অসন্তোষের ফলে ফ্রান্সে উগ্র দক্ষিণপন্থী শক্তির পুনরুত্থান ঘটতে পারে। জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ জমে উঠছে, তা ভবিষ্যতের নির্বাচনে রাজনৈতিক ভারসাম্য বদলে দিতে পারে।