বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এবং অসমের অরক্ষিত অঞ্চলে বসবাসকারী আদি বাসিন্দাদের জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার নিয়ম সহজ করেছে অসম সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, নতুন নীতির আওতায় সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ চাইলে আগ্নেয়াস্ত্র নিজের সঙ্গে রাখতে পারবেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে স্থানীয় জনগণ নিজেদের সুরক্ষার জন্য আইনগতভাবে অস্ত্র রাখতে পারবেন।
অসম সরকারের দাবি, সীমান্তবর্তী ও সংখ্যালঘু-প্রধান অঞ্চলে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই বিরাজমান। ছোটখাটো সংঘাত থেকে বড় ধরনের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে—এই আশঙ্কা থেকেই সরকার নতুন নীতি কার্যকর করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, যদি স্থানীয় মানুষ জানেন যে সম্ভাব্য ভুক্তভোগীদের কাছে অস্ত্র রয়েছে, তবে হামলাকারীরা হামলার আগে ভেবে নেবে।
অসম সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলেই অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া সম্ভব।আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে।অবশ্যই তিনি হতে হবে ভূমিপুত্র বা আদি বাসিন্দা।অরক্ষিত, সংবেদনশীল ও প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকরাই আবেদন করতে পারবেন।আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক মামলা বা রেকর্ড থাকা চলবে না।শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে।২০১৬ সালের অস্ত্র আইনের অধীনে অস্ত্র প্রশিক্ষণের শংসাপত্র থাকতে হবে।
সরকার একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করেছে, যেখানে সহজে আবেদন করা যাবে। আবেদনকারীদের পরিচয়পত্রসহ প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। তবে কোন অঞ্চলগুলোকে “অরক্ষিত ও সংবেদনশীল” বলা হচ্ছে, তা আবেদন প্রক্রিয়ায় স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের থানাগুলিতে মাত্র ৬ থেকে ১২ জন কনস্টেবল থাকে। কোনো সংঘাত দেখা দিলে জেলা সদর থেকে বাহিনী পৌঁছাতে ২-৩ ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে। এই ফাঁকে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই পুলিশ আসা পর্যন্ত স্থানীয়দের নিজেদের সুরক্ষার ক্ষমতা থাকা জরুরি।
মে মাসের মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানানো হয়েছিল, মূলত বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোতেই এই নীতি কার্যকর হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জেলা হলো: ধুবুড়ি, নগাঁও, মরিগাঁও, বরপেটা, দক্ষিণ শালমারা, গোয়ালপাড়া এসব অঞ্চলেই স্থানীয় ভূমিপুত্র ও জনজাতিরা নিরাপত্তাজনিত চাপে বসবাস করেন।
সরকারের দাবি, অনেক ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মাত্র ৫ শতাংশ থাকেন, আর অন্য সম্প্রদায় ৯০-৯৫ শতাংশ। এই বৈষম্যমূলক পরিস্থিতিতে সামান্য ঘটনা থেকেও বড় ধরনের সহিংসতা শুরু হতে পারে। তাই এই নীতি সংখ্যালঘুদের জন্যও এক ধরনের সুরক্ষা বলেই উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এই নীতিকে আত্মরক্ষার জন্য জরুরি বলা হচ্ছে, অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সাধারণ মানুষের হাতে সহজে অস্ত্র পৌঁছে দিলে অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে যায়। তাছাড়া কোন অঞ্চলকে সংবেদনশীল বলা হবে, তা নিয়ে এখনো যথেষ্ট স্বচ্ছতা নেই।
অসম সরকারের নতুন অস্ত্র লাইসেন্স নীতি সীমান্তবর্তী জনগণের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। স্থানীয়দের আত্মরক্ষার সুযোগ তৈরি হলেও এ নিয়ে বিতর্কও তুঙ্গে। সময়ই বলবে, এই পদক্ষেপ প্রকৃতপক্ষে নিরাপত্তা জোরদার করবে নাকি নতুন সমস্যার জন্ম দেবে।