সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে হ্যান্ডবুক বিতর্ক: কেরালার শিক্ষা দপ্তরে সমালোচনার ঝড়

সুভাষচন্দ্র বসু হ্যান্ডবুক বিতর্ক কেরালায় তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি করেছে। ব্রিটিশদের ভয়ে দেশ ছাড়েন দাবি ঘিরে উঠেছে চাঞ্চল্য।

সম্প্রতি কেরালার শিক্ষা দপ্তরের প্রকাশিত এক হ্যান্ডবুকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে একটি গুরুতর ভুল তথ্য সামনে আসে। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য তৈরি করা সেই হ্যান্ডবুকে লেখা হয়েছিল, সুভাষচন্দ্র বসু নাকি ব্রিটিশদের ভয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই শিক্ষাজগতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

শিক্ষকদের হাতে দেওয়া হ্যান্ডবুক সাধারণত পড়াশোনার মূল দিকনির্দেশিকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি শিক্ষক সেই বইয়ের উপর নির্ভর করেই ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করেন। তাই এতে প্রকাশিত প্রতিটি তথ্যই শিক্ষার্থীদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। অথচ নেতাজি সম্পর্কে ভুল তথ্য লেখা থাকায় বিষয়টি দ্রুত সমালোচনার কেন্দ্রে চলে আসে।

শিক্ষকরা হ্যান্ডবুক হাতে পেয়ে পড়ার সময়ই ভুলটি ধরতে পারেন। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি কেরালার শিক্ষা দপ্তরকে জানান। পরে শিক্ষা দপ্তর বইগুলি প্রত্যাহার করে নেয় এবং বিতর্কিত লাইনটি বাদ দিয়ে সংশোধিত সংস্করণ পুনরায় বিতরণ করে। এতে বোঝা যায়, শিক্ষকদের সতর্ক ভূমিকার কারণে ভুল তথ্য আর বিস্তার লাভ করতে পারেনি।

ইতিহাস বলছে, সুভাষচন্দ্র বসু কখনোই ব্রিটিশদের ভয়ে দেশ ছাড়েননি। বরং তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন কৌশল ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খুঁজতে বিদেশে যান। ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ বন্দিদশা থেকে পালিয়ে তিনি জার্মানির উদ্দেশ্যে রওনা দেন, পরে জাপানের সহায়তায় গঠন করেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। তাঁর সংগ্রামী জীবনপ্রবাহ প্রমাণ করে, তিনি ছিলেন সাহস ও দেশপ্রেমের এক অনন্য প্রতীক।

এই ভুল তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর সমালোচনার মুখে পড়ে কেরালার শিক্ষা দপ্তরের স্টেট কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (SCERT)। সমাজের নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে এমন গুরুতর ভুল একটি সরকারি অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকে স্থান পেল? শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষা শুধু তথ্য প্রদানের মাধ্যম নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিকতা গঠনেরও প্রধান স্তম্ভ। তাই কোনো ভুল তথ্য যদি শিক্ষার্থীদের মনে ঢুকে যায়, তবে তা ইতিহাস বিকৃতির সমান। এই ঘটনার মাধ্যমে শিক্ষা প্রশাসন উপলব্ধি করেছে, পাঠ্যবই বা হ্যান্ডবুক প্রকাশের আগে আরও নিখুঁতভাবে যাচাই করা জরুরি।

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল পর্যন্ত এই ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বহু মানুষ মত প্রকাশ করেছেন যে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রের অবহেলা নয়, বরং দেশপ্রেম ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে আঘাত করা।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা। তাঁকে ব্রিটিশদের ভয়ে দেশত্যাগী বলে আখ্যা দেওয়া কেবল একটি ভুল নয়, বরং ইতিহাস বিকৃতির একটি বড় উদাহরণ। কেরালার শিক্ষা দপ্তরের এই ভুল ভবিষ্যতে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও সতর্কতার বার্তা দিল। ইতিহাসের সত্যকে অক্ষুণ্ণ রাখা শুধু শিক্ষকদের নয়, বরং গোটা সমাজের দায়িত্ব।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »