অনেকেই মনে করেন, বিড়ালের আঁচড় সাধারণ একটি ব্যাপার। অ্যান্টিসেপ্টিক মলম লাগালেই সমস্যা মিটে যায়। কিন্তু বাস্তবে বিড়ালের আঁচড় বা কামড় থেকে এমন সংক্রামক রোগ হতে পারে, যা আপনার শরীরের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। চিকিৎসকেরা বারবার সতর্ক করছেন, বিড়ালের আঁচড়কে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
বিড়ালের আঁচড়ে কী ধরনের রোগ হতে পারে?
বিড়ালের আঁচড় থেকে অন্যতম গুরুতর সংক্রমণের নাম ‘ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ’ (Cat Scratch Disease)। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণাংশু তালুকদার জানিয়েছেন, এই রোগের কারণ হল বিড়ালের শরীরে থাকা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া— বোর্টোনেল্লা হেনসেলে (Bartonella henselae)। এই ব্যাকটেরিয়া শুধু আঁচড় বা কামড় নয়, বিড়ালের লালার মাধ্যমেও মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
এই ব্যাকটেরিয়া রক্তে মিশে শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যদি এই জীবাণু মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়, তবে তা গুরুতর স্নায়বিক সমস্যা এমনকি জ্ঞান হারানো পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
‘ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ’-এর উপসর্গ
- আঁচড়ের জায়গায় অস্বাভাবিক ফোলা
- প্রদাহ এবং ঘা বা পুঁজ জমা
- জ্বর ও মাথাব্যথা
- শরীরে দুর্বলতা
- গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
- স্নায়বিক সমস্যা (গুরুতর ক্ষেত্রে)
কী ভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন?
- পোষ্য বিড়াল হলে তার নখ নিয়মিত কেটে ফেলুন যাতে আঁচড়ের সম্ভাবনা কমে।
- বিড়ালের সঙ্গে খেলার পরে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন বা প্রয়োজনে স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
- সব ধরনের প্রয়োজনীয় টিকা বিড়ালকে দিন, বিশেষ করে যদি সেটি বাড়ির বাইরে যাতায়াত করে।
- আঁচড় লাগলে অবিলম্বে পরিষ্কার করুন—প্রথমে জল দিয়ে ধুয়ে নিন, তারপর অ্যান্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দিন।
- রক্তপাত হলে ব্যান্ডেজ করুন এবং টিটেনাস ইনজেকশন নিন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, বিশেষ করে যদি ফোলা, জ্বর বা ব্যথা বাড়ে।
কেন চিকিৎসা জরুরি?
আঁচড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করা ব্যাকটেরিয়া প্রাথমিকভাবে নিরীহ মনে হলেও, সময়মতো চিকিৎসা না হলে তা গুরুতর রূপ নিতে পারে। এমনকি হৃদযন্ত্র, যকৃত বা মস্তিষ্কে ক্ষতি করতে পারে। তাই সতর্ক থাকা এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সতর্কতা ও সচেতনতা এই ধরনের সংক্রমণ থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে। বিড়ালের আঁচড়কে কখনই অবহেলা করবেন না—সঙ্গে সঙ্গে সঠিক পদক্ষেপ নিন এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার সামান্য সচেতনতাই আপনাকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।