“জন্মিলে মরিতে হবে”— বাংলা সাহিত্যের চিরন্তন এই লাইন কি তবে একদিন মিথ্যে হয়ে যাবে? সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মানুষের পক্ষে অমরত্ব অর্জন আর দূরের স্বপ্ন নয়। বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, যদি কেউ আরও ২৫ বছর বেঁচে থাকতে পারেন, অর্থাৎ ২০৫০ সাল পর্যন্ত, তবে তিনি চাইলেই অমর হতে পারবেন।
মানবজীবনের এক চিরন্তন সত্য হলো জন্মের পরে মৃত্যু। এই চক্র থেকে কেউই মুক্ত নয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে, প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে গিয়েই মৃত্যু এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হতে পারে। অর্থাৎ মৃত্যু আর বাধ্যতামূলক নয়—যদি প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহার করা যায়।
প্রাথমিকভাবে এই প্রযুক্তি ও চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রথমে কেবলমাত্র ধনী ব্যক্তিরাই এই সুযোগ পাবেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যয় কমবে এবং সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেও চলে আসবে। সেই অর্থে বর্তমানে যাঁদের বয়স ৪০ বছরের নিচে, তাঁরা যদি ২০৫০ সাল পর্যন্ত সুস্থভাবে বেঁচে থাকেন, তবে অমর হওয়ার সম্ভাবনা তাঁদের হাতের নাগালেই।
গবেষকদের মতে, অমরত্ব অর্জনের মূল চাবিকাঠি হতে পারে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। বয়সজনিত কারণে শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোকে মেরামত করে নতুনভাবে তৈরি করা সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, এই প্রযুক্তি দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে নতুন যৌবন দান করতেও সক্ষম হতে পারে।
অমরত্ব অর্জনের জন্য বিজ্ঞানীরা আরও কিছু আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির কথা বলছেন—ন্যানো মেডিসিন: ন্যানো রোবট শরীরের কোষ মেরামত করবে।স্টেম সেল ট্রিটমেন্ট: নতুন কোষ তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ পুনর্গঠন করবে।জিন থেরাপি: ত্রুটিপূর্ণ জিন সংশোধন করে দীর্ঘায়ু ও স্বাস্থ্য রক্ষা করবে।এই সমস্ত প্রযুক্তি মিলে একদিন হয়তো মানবজীবনকে “অসীম সময়ের” পথে নিয়ে যাবে।
যদি মানুষ সত্যিই অমর হতে পারে, তবে এর প্রভাব মানবসভ্যতার ওপর ভয়াবহ ও গভীর হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সম্পদ বণ্টন, সামাজিক ও নৈতিক সংকট—সবকিছুই নতুনভাবে ভাবতে হবে। একইসঙ্গে নতুন সম্ভাবনাও উন্মুক্ত হবে, যেমন—জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির অশেষ বিকাশ।
তবে এসব এখনো গবেষণার স্তরে রয়েছে। বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা সফল হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু একথা নিশ্চিত—মানুষের অমরত্ব নিয়ে যে আলোচনা একসময় নিছক কল্পনা ছিল, তা আজ হয়ে উঠেছে বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা।
যদি সত্যিই আগামী ২৫ বছরের মধ্যে অমরত্ব অর্জনের পথ উন্মুক্ত হয়, তবে মানবসভ্যতা প্রবেশ করবে এক সম্পূর্ণ নতুন যুগে। আজকের এই অসম্ভব কল্পনা হয়তো আগামী দিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়াবে। তাই এখন থেকেই প্রশ্ন উঠছে—মানুষ কি সত্যিই মৃত্যুহীন জীবনের জন্য প্রস্তুত?