বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাকরিচ্যুত ৮৫ জন উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার (১৮ আগস্ট) এক আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে কর্মকর্তাদের চাকরিতে ফেরার সুযোগ তৈরি হলো।
এই পুনর্বহালের পেছনে রয়েছে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়। আদালত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, চাকরি হারানো কর্মকর্তাদের শুধু পুনর্বহালই নয়, বরং তাদের সকল সুযোগ-সুবিধা ফেরত দিতে হবে। অর্থাৎ, চাকরিচ্যুত অবস্থায় হারানো বেতন-ভাতা ও অন্যান্য প্রাপ্তি কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দিতে হবে।
২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার অভিযোগে ৮৫ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সে সময় অনেকেই মনে করেছিলেন, সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক প্রভাবিত এবং সুষ্ঠু প্রশাসনিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা বিষয়টি আদালতে চ্যালেঞ্জ করেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ প্রথম রায় দেন, যাতে পুনর্বহালের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সেই রায়ের বিরুদ্ধে চারটি পৃথক রিভিউ আবেদন করা হয়।
সবশেষে, ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ৮৫ কর্মকর্তাকে অবিলম্বে পুনর্বহাল করতে হবে।
আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর অবশেষে নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে পুনর্বহালের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এর মাধ্যমে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা আবারও তাদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত জীবনে স্বস্তি আনবে না, বরং নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় স্থিতিশীলতা আনবে।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন সবসময়ই দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাই এর সঙ্গে জড়িত যেকোনো সিদ্ধান্ত জাতীয় রাজনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলে।
৮৫ কর্মকর্তার পুনর্বহাল একদিকে ন্যায়বিচারের প্রতিফলন ঘটিয়েছে, অন্যদিকে ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা দিয়েছে—রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া অন্যায্য প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত টিকবে না।