প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা চার্লসের সঙ্গে মুখোমুখি হবেন? এ সাক্ষাৎ হলে কেবল রাজপরিবার নয়, হ্যারি-মেগানের পারিবারিক ভবিষ্যৎও নতুন মোড় নিতে পারে।
দেড় বছরের ব্যবধানের পর সম্ভাব্য মিলন
রাজা চার্লস এবং প্রিন্স হ্যারির শেষ দেখা হয়েছিল ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন হ্যারি বাবার ক্যানসার ধরা পড়ার খবর শুনে মাত্র ২৪ ঘণ্টার জন্য লন্ডনে ছুটে আসেন। হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সরাসরি Clarence House-এ গিয়ে বাবার সঙ্গে আধঘণ্টার মতো ব্যক্তিগত আলাপ করে আবার পরদিন ফিরে যান আমেরিকায়। এরপর থেকে তাঁদের আর একসঙ্গে বসা হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের চোখে ঝুঁকিপূর্ণ সাক্ষাৎ
রাজপরিবারের জীবনীকার টম বাওয়ার মনে করেন, এ সাক্ষাৎ মোটেও সহজ হবে না। তাঁর মতে, “হ্যারির সামনে বিশাল বাধা আছে। চার্লসও ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে চান, কিন্তু হ্যারি এমন একজন যিনি যেকোনো মুহূর্তে বিষয়টা বিব্রতকর অবস্থায় নিয়ে যেতে পারেন।”
এমনকি অতীতে আদালতে নিরাপত্তা মামলা নিয়ে সরকারের সঙ্গে হ্যারির লড়াই তাঁদের সম্পর্ক আরও জটিল করেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, চার্লসের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলোচনার বিষয় হ্যারি প্রকাশ করলে তা সাংবিধানিক সঙ্কটও তৈরি করতে পারে।

মেগানের অবস্থান ও নিরাপত্তা সংকট
এদিকে মেগান রয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেসিটোতে। টম বাওয়ার বলেন, মেগান জানেন হ্যারির কাছে পরিবারই সবার আগে। তবে যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়া নিয়ে তাঁর শঙ্কা কম নয়। রাজকীয় দায়িত্ব পালনের সময় তিনি অস্বস্তি বোধ করতেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই হ্যারির রাজপরিবারে ফেরার সম্ভাবনায় তিনি দ্বিধায় পড়তে পারেন।
প্রাক্তন রাজকীয় সংবাদদাতা জেনি বন্ড মনে করেন, মেগান সরাসরি যুক্ত না হলেও তাঁর সমর্থন ছাড়া হ্যারি বাবার সঙ্গে সাক্ষাতে এগোবেন না। কারণ, মেগানের কাছে অতীতের অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না।
আস্থা পুনর্গঠনের বড় বাধা
হ্যারির লেখা আত্মজীবনী Spare এবং নেটফ্লিক্স সিরিজে রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ অনেক গোপন তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। এতে তিনি কেবল আস্থা হারাননি, বরং প্রাসাদের ভেতরে বহু শত্রুও তৈরি করেছেন। টম বাওয়ার বলেন, “হ্যারি কখনও ক্ষমা চাইবেন না, তিনি মনে করেন নিজের কাজ ঠিক করেছেন। কিন্তু রাজা চার্লসের বড় প্রশ্ন হবে—আমি কি ছেলেকে আবার বিশ্বাস করতে পারব?”
রাজা চার্লসের স্বাস্থ্যের কারণে নরম মনোভাব
যদিও রাজা চার্লসের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রিন্স উইলিয়াম বাধা দেবেন না বলে মনে করেন টম। এমনকি রানি ক্যামিলাও স্বামীকে শান্ত রাখতে হ্যারির অতীত মন্তব্য ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।

গোপন আলোচনার ইঙ্গিত
গত জুলাইতে লন্ডনে রাজা চার্লসের দপ্তরের কর্মকর্তারা হ্যারি-মেগানের টিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে খবর পাওয়া যায়। যদিও এ বৈঠকের ছবি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় হ্যারি বিরক্ত হন। তবে অনেকেই মনে করছেন, এটাই হয়তো ভবিষ্যতের পুনর্মিলনের প্রাথমিক ধাপ।
হ্যারির দোটানা: পরিবার বনাম শেকড়
বর্তমানে হ্যারি দ্বিধায় রয়েছেন। একদিকে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় শান্ত জীবন, অন্যদিকে ব্রিটেনে নিজের শেকড়ের টান। টম বাওয়ার বলেন, “হ্যারি স্পষ্ট করেছেন তাঁর অগ্রাধিকার স্ত্রী ও সন্তানরা। কিন্তু তিনি ভেতরে ভেতরে চান ব্রিটেনের সঙ্গে সম্পর্ক জোড়া লাগাতে।”