মঙ্গলগ্রহকে ঘিরে মানুষের কৌতূহল নতুন নয়। বহু দশক ধরে বিজ্ঞানীরা এই লাল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি পাওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সেই সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করেছে। মঙ্গলের জেজেরো ক্রেটারে পারসিভিয়ারেন্স রোভার যে “স্যাফায়ার ক্যানিয়ন” বা নীলকান্তমণির মত গিরিখাতের সন্ধান দিয়েছে, তা মঙ্গল গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
মঙ্গলগ্রহে জীবনের প্রমাণের খোঁজ
প্রশ্ন থেকেই যায়—মঙ্গলে কি সত্যিই কোনও সময় প্রাণ ছিল? উত্তর খোঁজার জন্য বিজ্ঞানীরা নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাদের সবচেয়ে বড় সহায়ক হচ্ছে নাসার রোভার যানগুলো, বিশেষত পারসিভিয়ারেন্স রোভার। বহুদিন ধরে জেজেরো ক্রেটারে ঘুরে সংগৃহীত তথ্য ও নমুনা এখন গবেষণার নতুন আলো জ্বালাচ্ছে।
জেজেরো ক্রেটারের গুরুত্ব
জেজেরো ক্রেটার মঙ্গলের অন্যতম আলোচিত অঞ্চল। ধারণা করা হয়, বহু কোটি বছর আগে এটি ছিল এক বিশাল হ্রদ। সেখানেই পারসিভিয়ারেন্স রোভার আবিষ্কার করেছে স্যাফায়ার ক্যানিয়ন নামক এক গভীর গিরিখাত। এখানে পাওয়া শিলাগুলোতে এমন চিহ্ন দেখা গেছে যা প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে প্রবলভাবে ইঙ্গিত করছে।
স্যাফায়ার ক্যানিয়নের অমূল্য প্রমাণ
পারসিভিয়ারেন্সের সংগৃহীত শিলাগুলোতে জীবনের স্বাক্ষর বহনকারী রাসায়নিক ও জৈব উপাদানের উপস্থিতি সন্দেহাতীতভাবে পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, কয়েক শো কোটি বছর ধরে সেই প্রমাণ পাথরের গায়ে লেপ্টে আছে।
যদিও বিজ্ঞানীরা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না যে, এই প্রমাণ মানেই প্রাণের উপস্থিতি ছিল, তবে বিষয়টি নিঃসন্দেহে গবেষণার নতুন দিশা দেখাচ্ছে।
মঙ্গলে জল থাকার প্রমাণ
প্রাণের সম্ভাবনা মানেই জল থাকা আবশ্যক। ইতিমধ্যেই গবেষকরা প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন যে, মঙ্গলে অতীতে জল প্রবাহিত হয়েছিল। জেজেরো ক্রেটারের ভূতাত্ত্বিক গঠন ও শিলাস্তরের গঠন সেই ধারণাকে শক্তভাবে সমর্থন করছে।
এমনকি, নদী ও হ্রদের চিহ্ন মঙ্গলের পৃষ্ঠে এখনও দৃশ্যমান, যা একসময় প্রাণধারণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে।
বিজ্ঞান জগতে আলোড়ন
স্যাফায়ার ক্যানিয়নে পাওয়া এই সম্ভাব্য জীবনের প্রমাণ প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল গত বছর। তবে সম্প্রতি একটি শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান পত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আবিষ্কার মঙ্গলে প্রাণের ইতিহাস খুঁজে বের করার পথে এক বড় মাইলফলক হতে পারে। তবে তারা আরও গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর জোর দিচ্ছেন।
আগামীর চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
মঙ্গলে প্রাণ ছিল কিনা, তার সঠিক উত্তর পেতে এখনও সময় লাগবে। কিন্তু পারসিভিয়ারেন্সের আবিষ্কার প্রমাণ করছে যে, আমরা সত্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। ভবিষ্যতে আরও উন্নত রোভার মিশন, নমুনা সংগ্রহ এবং পৃথিবীতে এনে বিশ্লেষণ করার পরিকল্পনা এই রহস্য উন্মোচনে সহায়ক হবে।