বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এখন আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে ২৪ দফা অগ্রাধিকারভিত্তিক রোডম্যাপ, যেখানে নির্বাচনের প্রতিটি ধাপের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার অনুমোদনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইসির ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে। এর আগে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এই সময়সূচি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভোটাভুটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ। নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হবে। এর মাধ্যমে দেশের মোট ৩০০টি আসনের ভৌগোলিক সীমানা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ হবে। পাশাপাশি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা জিআইএস (ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা) ম্যাপ প্রকাশ করা হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। এই ডিজিটাল ম্যাপের ফলে প্রতিটি আসনের সীমানা আরও নির্ভুল ও স্বচ্ছভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে। নতুন দলগুলোর প্রাথমিক নিবন্ধনের শেষ সময়সীমা ১৪ সেপ্টেম্বর। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে নতুন রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিতে পারবে।
গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো সবার জন্য সমান ভোটাধিকার। এ বিষয়টি মাথায় রেখে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কারাবন্দিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ভোটের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে ব্যালট পেপার কারাগারে পাঠানো হবে। ফলে কারাগারে থাকা ভোটাররাও তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। ইসির মতে, এটি হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পথে একটি বড় পদক্ষেপ।
নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। নিবন্ধিত সংস্থাগুলো নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থেকে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘোষিত রোডম্যাপের প্রতিটি ধাপ সময়মতো সম্পন্ন করার জন্য তারা নিরলসভাবে কাজ করছেন। তাদের দাবি, এই প্রস্তুতি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পথ প্রশস্ত করবে।