বাংলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ মেঘনা হালদার, যিনি দর্শকদের কাছে মূলত ‘রাকা’ চরিত্রে খলনায়িকা হিসেবেই বেশি জনপ্রিয়। সম্প্রতি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এক ‘মাচা শো’-তে তাঁর বক্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে চরম বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল সেই ভিডিও এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
মঞ্চে বিতর্কিত মন্তব্য
অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মেঘনা রসিকতার সুরে বলেন,
“আমরা ধারাবাহিকে অভিনয় করি, তাই তিন-চারটে বিয়ে করতেই পারি। আপনাদের যদি ভালো পাত্র থাকে, তবে একটা বাংলো চাই, মার্সিডিজ় গাড়ি চাই আর পাঁচ কোটি টাকা—ব্যস এটুকুই।”
এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় নেটিজেনদের মধ্যে। অনেকে তাঁর কথাকে নিছক মজা হিসেবে নিলেও, বেশিরভাগই এটিকে অশালীন বলে সমালোচনা করেছেন।
নেটিজেনদের কটাক্ষ ও প্রতিক্রিয়া
মেঘনার সেই ভিডিওর নিচে একাধিক সমালোচনামূলক মন্তব্য ভেসে এসেছে।
একজন লিখেছেন, “৩০০ টাকায় আপনার মতো অভিনেত্রী পাওয়া যায়।”
আবার আরেকজনের মন্তব্য, “এমন কথা ভরা মঞ্চে বলার সময় আপনার অস্বস্তি হয়নি?”
তবে এত কটাক্ষের পরও মেঘনা এখনও পর্যন্ত কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি।
রাজপাল যাদবের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এই প্রথম নয়, বিতর্ক যেন বরাবরই অভিনেত্রীর জীবনের সঙ্গী। ২০২৪ সালে তিনি বলিউড অভিনেতা রাজপাল যাদবের বিরুদ্ধে ‘মি টু’ অভিযোগ করেছিলেন।
মেঘনার দাবি, বলিউডে কাজ শুরু করার সময় এক অনুষ্ঠানে রাজপাল যাদব তাঁর ঊরুতে হাত রাখেন। ঘটনাটি বুঝতে পেরে তিনি কোনো দ্বিধা না করে সপাটে চড় মারেন অভিনেতার গালে।
এই ঘটনার পর থেকেই মেঘনা জানান, তিনি অন্যায়ের সামনে মাথা নত করেননি, আর কোনোদিন করবেও না।
অভিনয় জীবন ও জনপ্রিয়তা
বাংলা টেলিভিশনের ধারাবাহিকে খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে মেঘনা হালদার দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর অভিনয় দক্ষতা দর্শককে যেমন বিরক্ত করেছে, তেমনই টিভির সামনে বেঁধে রেখেছে।
‘রাকা’ চরিত্রে অভিনয় তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। দর্শকরা যতই সমালোচনা করুন, খলনায়িকা চরিত্র ছাড়া ধারাবাহিক যেন অসম্পূর্ণ মনে হয়।
উদ্যোক্তা হিসেবেও সাফল্য
অভিনয়ের পাশাপাশি মেঘনা নিজের দক্ষতায় জায়গা করে নিয়েছেন ব্যবসায়িক জগতে। তিনি একজন অন্দরসজ্জাশিল্পী ও উদ্যোক্তা হিসেবেও পরিচিত।
অভিনয় জগতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ব্যবসায়িক মঞ্চেও সাফল্য তাঁকে এক বহুমুখী ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।
সমালোচনার মাঝেও দৃঢ় মেঘনা
মেঘনা হালদারকে ঘিরে যত বিতর্কই তৈরি হোক, তিনি নিজের অবস্থানে অটল। জীবনের নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়ে আজও তিনি লড়াই করে চলেছেন।
সমাজমাধ্যমে কটাক্ষ থাকলেও তাঁর ভক্তদের চোখে তিনি একজন সাহসী ও নির্ভীক অভিনেত্রী, যিনি ভুলের দায় নিতে জানেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেও পিছপা হন না।
উপসংহার
মেঘনা হালদারের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক যতই হোক, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে তিনি একজন সাহসী, স্পষ্টভাষী এবং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় যেন রূপকথার মতো নাটকীয়, যেখানে কখনো সমালোচনা, কখনো প্রশংসা—সবকিছু মিলেই তিনি আজকের মেঘনা।