আজিজুল হক জিল্লুর: যশোরের ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র

আজিজুল হক জিল্লুর খেলাধুলা অবদান ফুটবল, হকি, সাঁতার ও এ্যাথলেটিকসে যশোর থেকে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবময় ইতিহাস তৈরি করেছে।

বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে যশোর সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। এই জেলার ক্রীড়াপ্রেমী মানুষদের গর্বের একটি নাম আজিজুল হক জিল্লুর। হকি, ফুটবল, সাঁতার ও অ্যাথলেটিকসে তাঁর অবদান কেবল যশোরেই নয়, সমগ্র বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছে।

আজিজুল হক জিল্লুরের জন্ম ১৯৫৬ সালে যশোর শহরে। তাঁর পিতা মৌলভী আব্দুল মালেক মিয়া মূলত বরিশালের উজিরপুরের মানুষ হলেও চাকরির সূত্রে পরিবার নিয়ে যশোরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। চার ভাইবোনের মধ্যে জিল্লুর ছিলেন দ্বিতীয়। শৈশব থেকেই খেলাধুলার প্রতি তাঁর গভীর টান ছিল। শিক্ষা জীবনে আই.এস.সি. পর্যন্ত পড়াশোনা সম্পন্ন করেন তিনি।

খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা তাঁকে নিয়ে যায় মুসলিম একাডেমিতে। এখান থেকেই তিনি হকি, ফুটবল, সাঁতার ও অ্যাথলেটিকসে বিভাগীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে দ্রুতই তিনি যশোর জেলা দলের নিয়মিত খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন।

১৯৭৩ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত টানা এক দশক তিনি যশোর জেলা দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর গোলরক্ষকের দক্ষতা এবং লড়াইয়ের মানসিকতা যশোরকে বারবার জয়ের স্বাদ এনে দেয়।

১৯৭৬ সালে তিনি যশোর জেলা দলের হয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ী হন। এরপর ঢাকা লীগের বিভিন্ন শীর্ষ ক্লাবে খেলার সুযোগ পান।১৯৭৭ সালে খেলেন “বি জে এম সি”-এর হয়ে।১৯৭৯ সালে “ওয়ারী ক্লাব”-এ তাঁর পারফরম্যান্স ছিল দৃষ্টি কাড়া।১৯৮০ সালে ফুটবলের দুই মহারথী “মোহামেডান” ও “আবাহনী” উভয় দলই তাঁর গোলপোস্ট ভাঙতে ব্যর্থ হয়।১৯৮১ সালে “ব্রাদার্স ইউনিয়ন”-এর হয়ে ফেডারেশন কাপে যৌথ চ্যাম্পিয়ন হন।১৯৮২ সালে “আরামবাগ ক্লাব”-এ যোগ দেন, তবে পরবর্তীতে আঘাতজনিত কারণে খেলোয়াড়ি জীবন থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন।

ফুটবলের পাশাপাশি হকিতেও তাঁর অবদান ছিল প্রশংসনীয়। ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশ যুব একাদশের হয়ে কুয়েতে খেলতে যান। এছাড়া “ঢাকা মোহামেডান” হকি দলে অংশগ্রহণ করে রানার্সআপ অর্জন করেন।

খেলোয়াড়ি জীবনের অবসানের পরও তিনি ক্রীড়াঙ্গন থেকে দূরে থাকেননি। ১৯৯৫ সালে ফিফার অধীনে পেপসিকোলা কাপ ফুটবলে কোচ প্রশিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। একই বছরে এএফসি-এর অধীনে ফিফা সি কোচদের ট্রেনিং প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেন।

এরপর যশোরের তরুণ ফুটবল খেলোয়াড়দের গড়ে তুলতে তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন। বিশেষ করে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী যুব ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন।

যশোরের ক্রীড়াঙ্গনে আজিজুল হক জিল্লুরের অবদান অপরিসীম। তিনি কেবল একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়ই নন, বরং একজন অনুপ্রেরণাদায়ক কোচও। তাঁর হাত ধরে অনেক তরুণ খেলোয়াড় ফুটবলের প্রতি আগ্রহী হয়েছে এবং নিজেদের স্বপ্ন গড়তে শুরু করেছে।

আজিজুল হক জিল্লুর ছিলেন একাধারে খেলোয়াড়, যোদ্ধা ও প্রশিক্ষক। যশোরের মাঠে তাঁর সংগ্রাম এবং সাফল্য আজও ক্রীড়াপ্রেমীদের মনে জায়গা করে আছে। নতুন প্রজন্মের জন্য তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যিনি প্রমাণ করেছেন যে নিবেদন আর পরিশ্রম দিয়ে যে কেউই ইতিহাস গড়তে পারে।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »