বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনায় এসেছে গণঅধিকার পরিষদ। যশোর সদর উপজেলার দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা হঠাৎ করেই পদত্যাগ করায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল হক নূরের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এই পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
শনিবার যশোর সদর উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু বক্কার ছিদ্দিক এবং অর্থ সম্পাদক রাফাত রহমান দ্বীপ লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগপত্র জেলা সভাপতি ও সম্পাদক বরাবর পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়।
পদত্যাগী নেতাদের দাবি, দলীয় প্রধান নুরুল হক নূর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ‘পুনর্বাসনের’ ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত শুক্রবার যশোর শহরের টাউন হল মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে তার বক্তব্যের মধ্য দিয়েই এটি প্রকাশ পায়। তারা বলেন, আদর্শের সঙ্গে আপস করে রাজনীতি করা সম্ভব নয় বলেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
পদত্যাগপত্রে দুই নেতা উল্লেখ করেন, গণঅধিকার পরিষদ এখন স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করছে। জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী হলেও ভিন্নধারার রাজনীতির স্বপ্ন নিয়ে তারা এই দলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান কার্যক্রমে বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি থেকে দল সরে গিয়ে বিভাজনের পথে হাঁটছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
২২ আগস্ট যশোর জেলা গণঅধিকার পরিষদ টাউন হল ময়দানে একটি গণসমাবেশ আয়োজন করে। এ সমাবেশে দলীয় প্রধান নুরুল হক নূর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ‘ক্ষমা’ করার কথা বলেন। তার এই বক্তব্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের একাংশ মেনে নিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সেই ক্ষোভ থেকেই পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
পদত্যাগী অর্থ সম্পাদক রাফাত রহমান দ্বীপ বলেন, “গণঅধিকার পরিষদ এখন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নৈতিকতা ও আদর্শের জায়গা থেকে আমি পদত্যাগ করেছি। গতকালের সমাবেশে এটি স্পষ্ট হয়েছে দলের প্রধানের বক্তব্যে।”
তিনি তার পদত্যাগপত্র জেলা সভাপতি ও সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদককে পাঠিয়েছেন বলেও নিশ্চিত করেন।
সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শাকিল মল্লিক টিপু জানান, মৌখিকভাবে পদত্যাগের কথা শুনলেও এখনো কোনো লিখিত কপি হাতে পাননি। অন্যদিকে খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক ইকবাল বলেন, পদত্যাগীরা অতীতে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে তারা গণঅধিকার পরিষদে যোগ দিলেও বিএনপির পরামর্শে এখন সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আরও দাবি করেন, তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গণঅধিকার পরিষদ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ভিন্নধারার রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ও বক্তব্যে দলটির অভ্যন্তরীণ সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ বা স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রসঙ্গে নূরের অবস্থান দলের অভ্যন্তরে বিভক্তি তৈরি করেছে।