যশোরের রাজারহাটে মাদকবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে এক রক্তক্ষয়ী ঘটনার জন্ম দিলো। সিআইডি পুলিশের চার সদস্য স্থানীয়দের হামলার শিকার হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় কনস্টেবল শহিদুল ইসলামকে ভর্তি করা হয়েছে যশোর জেনারেল হাসপাতালে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তুষারসহ কয়েকজনকে আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিআইডির একটি বিশেষ দল রাজারহাট মোড়ে অভিযান চালায়। দলে ছিলেন এসআই হাবিব, এসআই তরিকুল ইসলাম, এএসআই মো. জাহিদ হোসেন ও কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম। তারা স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ রানার ছেলে তুষারকে ধরে কাশ্মীরি বিরিয়ানি হাউজে নিয়ে যান। তল্লাশির সময় তারা দাবি করেন, তুষারের কাছ থেকে ২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার হয়েছে।
তুষার তখন সিআইডি সদস্যদের ভুয়া পুলিশ বলে চিৎকার করতে থাকেন। তার অভিযোগ ছিল, তারা তার মোবাইল ও টাকা নিয়ে পালাতে চাইছে। বিষয়টি শুনে আশপাশের কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং তারা সিআইডি দলের ওপর হামলা চালায়। এসময় দুই পুলিশ সদস্য পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও শহিদুল ইসলাম ও আরেকজন সদস্য গণপিটুনির শিকার হন।

চা দোকানি মোতাহার হোসেন বলেন, “তুষার চিৎকার করছিল—আমাকে বাঁচাও, ওরা টাকা-মোবাইল নিয়ে যাচ্ছে। তখন লোকজন ক্ষেপে গিয়ে সিআইডি পরিচয় দেওয়া লোকদের মারধর শুরু করে।”
আটক তুষার অভিযোগ করেন, ইয়াবা দিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। তার ভাষ্য অনুযায়ী, দুই ব্যক্তি তাকে জোর করে একটি হোটেলের ভেতরে নিয়ে যায়। তারা তার কাছ থেকে দুটি ফোন ও পাঁচ হাজার টাকা নেয়। পরে একজন তার হাতে থাকা একটি পোটলা দেখিয়ে বলে, ইয়াবা পাওয়া গেছে। তখন তুষার প্রতিবাদ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। তার দাবি, এটি ছিল পরিকল্পিত ফাঁদ।
যশোর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোসাঃ সিদ্দিকা বেগম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমাদের সদস্যরা নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গিয়েছিল। কাউকে ফাঁসানোর প্রশ্নই আসে না। তুষারের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক মামলা রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, সরকারি কাজে বাধা ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে তুষারের নামে মামলা হয়েছে। অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানা পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে।
ঘটনার পর থেকে রাজারহাট এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই মোড়ে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। স্থানীয়রা মনে করছেন, যদি অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যরা ড্রেসে থাকতেন, তবে এই ধরণের ভুল বোঝাবুঝি হয়তো ঘটতো না।