বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) যশোর জেলার দ্বাদশ জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মাহবুবুর রহমান মজনু এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার আবু হাসান। শনিবার বিকেলে যশোর শহরের বি সরকার ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চ মিলনায়তনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনের সূচনা হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে। উদ্বোধন করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হোসাইন রশীদ। সম্মেলনে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
নির্বাচিত কমিটির অন্যান্য পদাধিকারীরা হলেন: সহ-সাধারণ সম্পাদক: অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান হিরু, সদস্য: অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, আব্দুল মজিদ, আব্দুর রহিম, মফিজুর রহমান নান্নু, কিশোর কুমার কাজল, কামরুন্নাহার কনা, গোলাম মোস্তফা মন্টু এবং স্বপন মণ্ডল।
সম্মেলন উদ্বোধনের পর পরিবেশিত হয় উদীচী যশোর সংসদের শিল্পীদের প্রাণবন্ত গণসংগীত। এ পরিবেশনা পুরো মিলনায়তনে উচ্ছ্বাসের সঞ্চার করে।
পরবর্তীতে নেতা-কর্মীরা লাল পতাকা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করেন। মিছিল শেষে আবারও সম্মেলনস্থলে সমবেত হয়ে মূল অধিবেশন শুরু হয়।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হোসাইন রশীদ সম্মেলনে বলেন, “বর্তমান জাতীয় প্রেক্ষাপটে শোষণ ও বৈষম্য রোধে একটি বামপন্থী গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। সিপিবি সবসময়ই কৃষক, শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে কাজ করে যাচ্ছে। দরিদ্র ও মেহনতি মানুষের ওপর অবিচারের জুয়া খেলা আর সহ্য করা হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “দেশকে পুনরায় পাকিস্তান বানানোর যে ষড়যন্ত্র চলছে, তা প্রতিরোধ করতে সিপিবি অঙ্গীকারবদ্ধ। সিপিবির কর্মীরা যতদিন বেঁচে আছেন, ততদিন এই লড়াই চলবে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যেমন সিপিবি বুকের রক্ত ঢেলেছিল, তেমনি ভবিষ্যতেও প্রয়োজনে একই ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।”
সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন সিপিবির যশোর জেলার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. কিবরিয়া।
সম্মেলনে অতিথিরা যশোরে সংগঠন শক্তিশালীকরণ, বামপন্থী আন্দোলনের প্রসার, এবং সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
সম্মেলনে নবনির্বাচিত জেলা কমিটি দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার ও কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি নিয়ে একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে।
প্রধান লক্ষ্যসমূহ:
- শ্রমজীবী মানুষের অধিকার সুরক্ষা, কৃষি খাতের উন্নয়ন এবং কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ, শ্রমিক সংগঠনের একত্রীকরণ ও মজুরি বৃদ্ধির দাবি, গণতান্ত্রিক আন্দোলন শক্তিশালীকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবি
সম্মেলনে বক্তারা উল্লেখ করেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় বামপন্থী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জরুরি। সিপিবির লক্ষ্য শুধুমাত্র দলীয় উন্নয়ন নয়, বরং শ্রমজীবী জনগণের মুক্তি ও সমতা প্রতিষ্ঠা।
যশোর জেলা কমিটি নবনির্বাচিত নেতৃত্বের মাধ্যমে আগামী দিনে গণআন্দোলন জোরদার করবে এবং সামাজিক বৈষম্য হ্রাস ও শ্রমিক অধিকার রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেবে।